গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শেষ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথম বার স্বাধীনতা দিবস পালনের। এই ঘোষণার পর থেকেই নেটমাধ্যমে ব্যাপক আক্রমণ ও কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে সিপিএম নেতা-নেত্রীদের। সেই আক্রমণের জবাব দিতে প্রয়াত সিপিএম নেতা বিটি রণদিভের একটি বইকে হাতিয়ার করতে চলেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তাঁর লেখা, ‘ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের ভূমিকা’ বইটিই এখন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বড় ভরসা। রবিবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস দলের সর্বস্তরের কমিটিকে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পার্টির এমন নির্দেশের কথা জানাজানি হতেই নেটমাধ্যমে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হতে শুরু করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ স্লোগান কেন দেওয়া হয়েছিল? কেউ বা প্রশ্ন তোলেন, পার্টি অফিসে জাতীয় পতাকা তুলতে ৭৫ বছর সময় লাগল কেন? কেউ কেউ আবার বলছেন, সিপিএম আবার কবে ভারতীয় হল যে ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করবে?
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কমিউনিস্টদের অবদান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেটাগরিকরা। এমনকি কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, ভারত নয়, চিনের স্বাধীনতা দিবসে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সে দেশের পতাকা তোলা হোক। এর পরেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত রণদিভের একটি বইকে নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও, বইটি তাঁর লেখা একটি ইংরেজি বইয়ের বঙ্গানুবাদ। প্রসঙ্গত, এই বইতে বামপন্থী নেতা রণদিভে দাবি করেছিলেন, কমিউনিস্টরাই জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে প্রথম সোচ্চার হয়। ১৯২১ সালে আমদাবাদে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের ৩৬তম অধিবেশন উপলক্ষে প্রচারিত হয় মানবেন্দ্রনাথ রায় এবং অবনী মুখোপাধ্যায় স্বাক্ষরিত ইস্তেহার। শুধু ইস্তেহার প্রচার নয়, ইলাহাবাদে অধিবেশনে মৌলানা হসরত মোহানী এবং স্বামী কুমারানন্দ উত্থাপন করেন পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব। এ ছাড়াও, ১৯৪৬ সালে তত্কালীন বম্বের নৌবিদ্রোহে কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃত্বের কথা যেমন উল্লেখ করা হয়েছে বইটিতে, তেমনই ত্রিবাঙ্কুরের কৃষক আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকার কথা বইটিতে উল্লেখ করেছিলেন রণদিভে। তাই পার্টি কর্মীরা যাতে সব রকম আক্রমণের জবাব দিতে পারেন। তাই নেটমাধ্যমে বইটি সোমবার থেকেই দলের সর্বস্তরের কর্মীদের কাছে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।
সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘শুধু কমরেড রণদিভেই নন। স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে হরকিষন সিংহ সুরজিৎ, নাম্বুদিরিপাদের লেখা বই প্রকাশ হয়েছে। যে হেতু রণদিভের বইটিই সহজে পাওয়া সম্ভব ছিল, তাই হয়তো নিচুতলার কমরেডদের কাছে রণদিভের বইটি পাঠানো হয়েছে।’’
নেটমাধ্যমে যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা ইতিহাস জানেন না বলেই দাবি করেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা আন্দোলনে কমিউনিস্টদের কী ভূমিকা ছিল তা অনেকেই হয়তো জানেন না। নানা সময় দলের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে। আমিও গত বছর দলের এক মুখপত্রের শারদীয় সংখ্যায় স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষে কমিউনিস্টদের অবদান নিয়ে লিখেছিলাম। আমাদের পার্টির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিবস পালনের যেমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, না পালন করারও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমি ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বে থাকার সময় আলাদা ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে ক্যাসেট বার করেছিলাম। সে ক্ষেত্রেও কমিউনিস্টদের স্বাধীনতা আন্দোলনে কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সিপিএম নয়, বরং আরএসএস নাগপুরে কখনও স্বাধীনতার পর পতাকা তোলেনি। তারা পতাকার বিরোধিতা করেছে, আমরা কখনও জাতীয় পতাকার বিরোধিতা করিনি।’’