রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
একই সঙ্গে দু’রকম বয়ান কী ভাবে গণপ্রহার প্রতিরোধ বিলে থাকল, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতারা। এ বার সেই প্রশ্ন তুলেই তাঁদের অভিযোগকে ‘মান্যতা’ দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সরকার পক্ষ অবশ্য তাঁর সঙ্গে সহমত নয়।
রাজ্যপালের বক্তব্য, বিধানসভায় পেশ করার জন্য যে বিলে তিনি ছাড়পত্র দিয়েছিলেন আর যে বিল পাশ করিয়ে তাঁর চূড়ান্ত সম্মতির জন্য রাজভবনে পাঠানো হয়েছে, দু’টো এক নয়! ওই বিল এখনও রাজ্যপালের সম্মতির জন্য আটকে আছে। বিধানসভা ঘুরে দেখতে গিয়ে ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘গণপ্রহার প্রতিরোধ বিল কেন সই করা হচ্ছে না, তা নিয়ে নানা রকম কথা হচ্ছে। বিরোধী নেতারা বিল নিয়ে অভিযোগ জানানোর পরে আমি খোঁজ নিয়ে সবিস্ময় দেখেছি, পেশ করার জন্য যে বিলে সই করেছিলাম এবং যে বিল পাশ করানো হয়েছে, দু’টো আলাদা! সরকার ও বিধানসভাকে প্রশ্ন করার পরে তারা জানিয়েছে, ভুল হয়েছিল।’’ এই ভুল যথেষ্ট গুরুতর বলে জানিয়ে রাজ্যপাল আরও জানান, বিল পাশের দিনের অধিবেশনের কার্যবিবরণী চেয়ে চার বার চিঠি দিয়ে তিনি একই উত্তর পেয়েছেন— কার্যবিবরণী এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই ‘ইনফোকম’-এর মঞ্চে মন্তব্য করেছেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, বিল সই না হওয়ায় বিধানসভা মুলতুবি হয়ে গেল। সেটা চূড়ান্ত বিল ছিল না। শুধু তা পেশ করার জন্য অনুমতির দরকার ছিল। আমরা এ সবের সম্মুখীন হচ্ছি। অবশ্য তাতে আমরা কিছু মনে করি না। আমরা লড়াই করব।’’ প্রসঙ্গত, রাজভবন থেকে বিলে সম্মতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় নজিরবিহীন ভাবে দু’দিন বন্ধ হয়েছে বিধানসভার অধিবেশন।
গণপ্রহার সংক্রান্ত বিল সরকার পক্ষ ‘বেআইনি’ ভাবে পাশ করিয়েছে বলে রাজ্যপালের এ দিনের বক্তব্যের পরে ফের সরব হয়েছে বিরোধীরা। সরকার পক্ষ অবশ্য এখনও তাদের ব্যাখ্যাই বহাল রেখেছে। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই বিল পেশ হয়েছিল।’’ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘পাশ হয়ে যাওয়া বিল তো আর রাজ্যপাল সংশোধন করতে পারবেন না! তিনি বিল নিয়ে বসে আছেন কেন? পাশ হওয়া বিল সই করে দিতে পারেন। ফেরত পাঠালে আমরা আবার পাঠাতে পারি।’’ আবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘দু’টো বিলের নম্বর নিয়ে বিতর্ক ছিল। সেটা মিটে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যপাল সরকারের কথা না শুনে বিরোধীদের কথাই বিশ্বাস করছেন!’’
বিধায়কদের মধ্যে প্রথমে বিলি হওয়া বিলে গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা বলা ছিল। কিন্তু পরের দিন পেশ হওয়া বিলে প্রাণদণ্ডের সংস্থান ছিল। অথচ দুই বিলের মেমো নম্বর একই! এই ‘অনিয়ম’ নিয়ে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। মান্নানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রথম বিলে সংশোধনী আনা যেত বা নতুন মেমো নম্বরে বিল পেশ করার যেত। সে সব না করে সরকার বেআইনি কাজ করেছে, আমরা প্রথম থেকেই তা বলেছি।’’ আর সুজনবাবুর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপালের কথায় স্পষ্ট হল, সরকার যা করেছে, সাধারণ মানুষ চলতি কথায় তাকে জালিয়াতি বলেন!’’