বাংলাদেশে হওয়া ১৯৭১ সালের ঘটনাক্রম নিয়ে প্রদর্শনীর উদ্যোগ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রবিবার যাদবপুরের পালবাজার এলাকার সংস্কৃতি চক্র প্রেক্ষাগৃহে ‘দ্য বাংলাদেশ ফাইল্স’ প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। আচমকাই বাতিল হয়ে গেল সেই প্রদর্শনী। প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষের ‘বাঙালি হিন্দু গণহত্যা’ নিয়ে আপত্তি থাকার কারণেই এই প্রদর্শনী করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলল আয়োজক সংস্থা ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’। প্রদর্শনী বাতিলের প্রতিবাদে রবিবার বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছে আয়োজক সংস্থা। ওই কর্মসূচিতে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা শামিল থাকবেন বলে শোনা গিয়েছে। পাল্টা সংস্কৃতি চক্রের তরফেও জানানো হয়েছে, সঠিক তথ্য দিয়ে প্রদর্শনী দেখানোর আবেদন করেনি ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ‘বাঙালি হিন্দুদের উপর অত্যাচার’-এর ঘটনা নিয়েই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’। বাংলাদেশ থেকে আসা বহু উদ্বাস্তু মানুষের বাস যে হেতু যাদবপুর, তাই প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন সেখানেই হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন আয়োজকরা। পাশাপাশিই, তাঁদের বক্তব্য, এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। যদিও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। শুধু তাই নয়, এই প্রদর্শনীর জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল বিজেপি-র পক্ষ থেকেই। কিন্তু অনুমতি দেওয়ার পরেও হঠাৎই সংস্কৃত চক্রের তরফে জানিয়ে হয়, প্রেক্ষাগৃহে ওই প্রদর্শনী করা যাবে না।
প্রদর্শনীর অনুমতিপত্রে নেই 'বাঙালি হিন্দু গণহত্যা'র উল্লেখ
এর পরেই ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ সংস্থার অন্যতম কর্তা মোহিত রায় একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘ইসলামি মৌলবাদ সমর্থক বামপন্থী সংস্থা সংস্কৃতি চক্র শেষ মুহূর্তে তাদের সভাগৃহ ব্যবহারের অনুমতি প্রত্যাহার করেছে। তাদের আপত্তি বাঙালি হিন্দু গণহত্যা নিয়ে। তারা অনুমতি দিয়েও পরে পুলিশের অনুমতি নেওয়ায় অজুহাত তোলে। আমরা কলকাতা পুলিশের হেড কোয়ার্টার ও গরফা থানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা কোনও আপত্তি করেনি।’’
মোহিত আগে রাজ্য বিজেপি-র উদ্বাস্তু শাখার প্রধান ছিলেন। এখন রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র। প্রেক্ষাগৃহের কর্তৃপক্ষ বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী বলে দাবি করে মোহিতের অভিযোগ, ’৭১-এর বাংলাদেশে ‘বাঙালি হিন্দুদের গণহত্যা’ ইতিহাস পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা লুকিয়ে রাখতে চান। তাই এই প্রদর্শনী বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রদর্শনী বাতিলের প্রতিবাদে যাদবপুর পালবাজারের মোড়ে বিকেল ৫টায় সমবেত হবেন তিনি ও তাঁর সংস্থার সদস্যরা। সেখানেই তাঁরা প্রদর্শনীর চিত্র দেখাবেন।
পাল্টা সংস্কৃতি চক্রের কর্তা প্রদীপ দত্ত বলেন, ‘‘ওঁরা আবেদনে জানিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রদর্শনী হবে। কিন্তু পরে ওঁদের অনুষ্ঠান পোস্টারে দেখলাম, বাঙালি হিন্দু গণহত্যা নিয়ে প্রদর্শনী। আমরা বলেছিলাম, পুলিশের থেকে অনুমতি নিতে। পরে দেখলাম, পুলিশের কাছে অনুমতি চাইতে গিয়েও মুক্তিযুদ্ধের প্রদর্শনী বলে দাবি করেছিল ওঁরা। তাই হয়তো পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি হিন্দু গণহত্যা নিয়ে প্রদর্শনীর অনুমতি আমরা দিতে পারব না।’’