২০১৪ সালের টেটে মোট ১৬ হাজার ৫০০ জনের নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে মনে করেছে হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতীর টাকা কোথা থেকে এসেছে, কোথায় গিয়েছে, তার সন্ধানে নতুন এফআইআর দায়ের করে তদন্তে নামল সিবিআই। এ ব্যাপারে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতির নেপথ্যে থাকা অনেক মাথাই এখনও আড়ালে রয়ে গিয়েছে আশঙ্কা করে সিবিআইকে পদক্ষেপ করতে বলেছিলেন বিচারপতি। হাই কোর্টের নির্দেশেই নিয়োগ দুর্নীতির ‘অজানা’ সূত্রের সন্ধানে নতুন এফআইআর দায়ের করল সিবিআই।
শনিবার ১৮ মার্চ এই সংক্রান্ত এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাতে সিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অজ্ঞাত পরিচয় কিছু কর্মী এবং কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে ২০২০ সালে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, মূলত সেই প্রক্রিয়াতেই বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকার অভিযোগে এই মামলা। মোট ১৬ হাজার ৫০০ জনের নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে মনে করেছে হাই কোর্ট। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই তদন্ত করবে সিবিআই।
সিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অজ্ঞাত পরিচয় কিছু কর্মী এবং কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
গত ২ মার্চ এ বিষয়ে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের টেটের উত্তরপত্র মূল্যায়নের বরাত পেয়েছিল এস. বসু রায় এন্ড কোম্পানি। তাঁদের দেখা উত্তরপত্রে যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের বেশি নম্বর পাইয়ে দিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতি সিবিআইকে বলেছিলেন, কী ভাবে পর্ষদের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব এই সংস্থাকে দেওয়া হল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এই সংস্থাকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কনফিডেন্সিয়াল সেকশন বলে উল্লেখ করেছিল। সূত্রের খবর, এই মামলার তদন্তের সূত্রে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন অ্যাড হক কমিটির সদস্যদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই। প্রয়োজনে তাঁদের হেফাজতেও নিতে পারবে। তবে তৎকালীন অ্যাডহক কমিটিতে একজন অশিতীপর মহিলাও ছিলেন। তাঁকে হেফাজতে নেওয়া যাবে না বলে আগেই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
২ মার্চ ওই শুনানিতে বিচারপতি বলেছিলেন, সিবিআইয়ের সঙ্গে ইডিও এই মামলার তদন্ত করবে। তাদের ২০ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নতুন করে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের ওপর আমার ভরসা আছে, কিন্তু পুলিশের ওপর সরকার প্রভাব রয়েছে। আর এখানে অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সরকারের অধীন। এমনকি, এই পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার হলেও এখনও রাজ্যের বিধায়ক। যেহেতু পুলিশ এবং পর্ষদ দুই-ই রাজ্য প্রশাসনের অঙ্গ তাই আবার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকেই দিলাম।’’
নিয়োগ মামলার শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই ২০২০ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্যানেল প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই প্যানেলে একাধিক অসঙ্গতি আছে এই অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন একাধিক চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের আর্জির ভিত্তিতেই সিবিআইকে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। নতুন করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘আমাকে একটা সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে গন্ডায় গন্ডায় সিবিআই কেন দেওয়া হয়েছে ? আমি বলেছিলাম গন্ডায় গন্ডায় দুর্নীতি হয়েছে, তাই গন্ডায় গন্ডায় সিবিআই দিতে হয়েছে। আজ আবার দিলাম।’’