প্রতীকী ছবি.
ছ’মাসের চেষ্টা। ঠিক কোন স্থান থেকে সক্রিয়, তা বুঝতে সময় লেগেছে প্রায় চার মাস। গত দু’মাস ধরে গতিবিধি পুঙ্খানুপুঙ্খ নজরদারি চালিয়েছে দিল্লির গোয়েন্দারা। দিন ১৫ আগে ধৃতদের বাড়ির চারপাশ ঘুরে আসেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল। তার পরেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনী এবং এনআইএ’র যৌথ অভিযানে শনিবার ভোরে মুর্শিদাবাদের ছয় আল কায়দা জঙ্গিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন একাধিক এজেন্সি আইএসএবং আল কায়দার ‘হ্যান্ডলার’দের উপরে ইলেকট্রনিক নজরদারি চালাতে থাকে। এমনই এক পাকিস্তানি চাঁই (ভারতীয় গোয়েন্দারা যার উপরে দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি চালাচ্ছেন) এর্নাকুলামের তিন সন্দেহভাজনের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ যোগাযোগ করে। কিছু দিন কথাবার্তা চালানোর পরে ডার্ক ওয়েবে আমন্ত্রণ জানায় তাদের। চলতে থাকে কথাবার্তা এবং জেহাদি বার্তা আদানপ্রদান। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ‘দ্য ওনিয়ন রাউটার’(The Onion Router) বা ‘টিওআর’ (টর) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এর্নাকুলামের তিন যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকে পাকিস্তানি চাঁই।
দ্য ওনিয়ন রাউটার প্রজেক্ট নেটওয়ার্কে পেঁয়াজের খোসার মতে বিভিন্ন স্তরে বেনামে ব্যবহারকারীরা লুকিয়ে থাকে এবং হাজার হাজার স্তরে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। আইপি অ্যাড্রেস, বা ব্যবহারকারীর প্রকৃত নাম, লোকেশন কিছুই এই নেটওয়ার্কে জানা সম্ভব হয় না। এমনই গোপন টর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাকিস্তানে বসে আল কায়দার চাঁই এখানে যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। যা গোয়েন্দারা ধরে ফেলেন। ধীরে ধীরে দেখা যায় সেই গোপন গোষ্ঠীতে সংখ্যা বাড়ছে। ডোমকল, জলঙ্গির মতো স্থানের নাম আসাতেই ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সাইবার সেল জানতে পারে, মুর্শিদাবাদের কোনও যোগসূত্র এই গোষ্ঠীতে রয়েছে। ধীরে ধীরে খোঁজা শুরু হয়। এই যোগসূত্রের সন্ধান মেলে ছ’মাস আগে।
কিন্তু তার পরেও চার মাস সময় লেগে যায় ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট লোকেশন খুঁজে বার করতে। প্রত্যেকেই ভিন্ন নামে টর-এ বার্তা চালাচালি করছিল, ফলে এরা আসলে কোন জায়গার এবং কারা, জানতে আরও সময় চলে যায়। মাস দু’য়েক আগে মুর্শিদাবাদের পাঁচটি থানা এলাকার পাঁচ জনকে চিহ্নিত করে ফেলেন গোয়েন্দারা। তাঁদের সর্বক্ষণের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছিল। এক গোয়েন্দা কর্তা জানাচ্ছেন, ভারতের আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে ধৃতদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এই সংগঠন ভারতে আল কায়দার শাখা সংগঠন হিসাবে কাজ করে। এই সংগঠনের মাধ্যমেই পাকিস্তানি চাঁইয়ের হাতে যায় এর্নাকুলাম ও মুর্শিদাবাদের ৯ যুবক। এঁরা সকলেই একে অপরের পরিচিত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ডার্ক ওয়েবে এ ভাবে জেহাদে উদ্বুদ্ধ করা আইএস বা আল কায়দার পুরনো পদ্ধতি। অনেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফের বেরিয়েও যায়। কারণ, ধীরে ধীরে এদের মধ্যে থেকে বাছাই করে নাশকতার কাজে ব্যবহার করা হয়। যত দিন মুর্শিদাবাদের যুবকেরা জেহাদের পুঁথিগত বিদ্যা নিচ্ছিল, ততদিন নজরদারি চালানো হচ্ছিল। গত দু’মাসে হঠাৎই এদের বন্দুক, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ছুরি, লেদ মেশিন ইত্যাদি জোগাড় করতে বলছিল পাকিস্তানি চাঁই। সম্ভবত ধৃতদের কারও সঙ্গে দেখাও করেছে সে। দিল্লি, কেরল এবং বাংলার বড় ধরনের নাশকতা, খুন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে শুরু করেছিল ধৃতেরা। এর পরে আর কোনও ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। দিল্লিতে মামলা রুজু করে এর্নাকুলাম ও মুর্শিদাবাদে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে জঙ্গিদের। জেরায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলবে বলেই আশা গোয়েন্দাদের।
আরও পড়ুন: ‘পড়াশোনা নিয়ে কথা হত দুই বন্ধুর’