মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দলের দুই পরিচিত নেতার শাস্তি ঘোষণা নিয়ে চরম নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরেও সেই ঘোষণা নিয়ে ‘ঠেলাঠেলি’ চলছে প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে। ঘটনায় বিস্মিত দলের শীর্ষ নেতৃত্বও।
একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে দলের অন্দরে শৃঙ্খলারক্ষায় বিশেষ জোর দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। নানা স্তরে নতুন করে কমিটি গড়ে একাধিক ‘বেয়াড়া’ নেতা-কর্মীকে সাম্প্রতিক অতীতে শাস্তিও দিয়েছে তৃণমূল। এই গতি ছেদ পড়েছে দুই নেতার শাস্তির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা নিয়ে। ঘটনাচক্রে, তাঁদের এক জন প্রাক্তন বিধায়ক, একদা মমতারই ‘স্নেহধন্য’ হিসেবে দলে পরিচিত ছিলেন। অন্য জন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে ইদানিং মূল স্রোতের রাজনীতিতে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন। দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘এই রকম একটা ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। কিন্তু যে হেতু শাস্তির বিষয়টির সঙ্গে সর্বোচ্চ নেত্রী জড়িয়ে আছেন, তাই বিশেষ কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
আর জি কর হাসপাতালের ঘটনাবলির সময় থেকেই তৃণমূলের অন্দরের চাপানউতোর প্রকাশ্যে চলে আসে। স্বাস্থ্য ও পুলিশ প্রশাসনের কাজকর্ম নিয়ে একাংশের প্রশ্নে অস্বস্তির মুখে পড়ে নবান্ন। প্রকাশ্যে আসে এই পরিস্থিতি নিয়ে অভিষেকের অসন্তোষও। সেই পর্বে দলের দুই সাংসদ জহর সরকার ও সুখেন্দুশেখর রায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ ও দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। সেই টানাপড়েনে বাড়তি মাত্রা যোগ করে অভিষেককে প্রশাসনে আনার দাবি। তাতেসামগ্রিক ভাবে যে বিশৃঙ্খলার সুর বাজতে শুরু করে, তা সামাল দিতে তিনস্তরে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়ে ‘বেয়াড়া’বয়ানে রাশ টানতে শুরু করে তৃণমূল। কিন্তু এই অবস্থায় এই দুই নেতাকে নিয়ে বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে।তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশের পরেও পদক্ষেপ করতে পারেননি নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রে খবর, দিন দশেক আগেই ওই দুই নেতার শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। শুধু তা-ই নয়, কে ওই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আনবেন, তা-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তথা দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য তা ঘোষণা করতে রাজি হননি। দিনকয়েক এই নিয়ে টানাটানিও চলে। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আরও এক সদস্যও এই দায়িত্ব নিতে চাননি। ফলে, মমতার নির্দেশের পরেও ওই শাস্তির কথা ঘোষণা করতে পারেনি তৃণমূল। দায়িত্ব ঠেলাঠেলি অব্যাহত রয়েছে।