বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের জন্য একটি চিনা সংস্থাকে চাকার বরাত দেওয়া হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে চাকা না-মেলায় ভারতীয় রেলের গর্বের ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উৎপাদন ব্যাহত হতে বসেছিল। পরে রোমানিয়া থেকে সেই চাকা এনে কোনও মতে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের জন্য একটি চিনা সংস্থাকে চাকার বরাত দেওয়া হয়েছে। তবে চাকা উৎপাদনে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে এ বার দেশের বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসার আবেদন জানাল রেল।
রেলের পক্ষ থেকে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বছরে ৮০ হাজার চাকা তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করে বরাত দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রেলগাড়ির চাকা রফতানি করার কথাও। আগ্রহী সংস্থাগুলিকে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে কারখানা তৈরি করে হাইস্পিড এবং সেমি-হাইস্পিড ট্রেনের জন্য ‘ফোর্জড হুইল’ বা পেটা লোহা থেকে চাকা উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে হবে। তবে ঠিক ওই সময়সীমার মধ্যে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
দেশে এখন পেটা লোহা থেকে রেলের চাকা তৈরি হয় মাত্র একটি জায়গাতেই, দুর্গাপুরে সেলের কারখানায়। বেঙ্গালুরুর রেল হুইল ফ্যাক্টরি ‘কাস্ট আয়রন’ বা ঢালাই লোহা থেকে ট্রেনের চাকা তৈরি করে, যেগুলি মূলত মালগাড়িতেই ব্যবহার করা হয়। পরের দিকে কলকাতা মেট্রোয় সেই সব চাকার ব্যবহার শুরু হয় ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির তৈরি রেকে। বিহারের বেলা শহরে একই প্রযুক্তিতে রেলগাড়ির চাকা তৈরি হয়।
বেশ কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীতে রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেডের মাধ্যমে রেলগাড়ির চাকা তৈরির উদ্যোগ চললেও সেই কারখানায় এখনও পর্যন্ত উৎপাদন শুরু করা যায়নি। তার মধ্যেই নতুন কারখানা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার তথা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন নির্মাণের অন্যতম হোতা সুধাংশু মণি। তাঁর মতে, কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহার তৈরি চাকা নিয়ে ভারতে যথেষ্ট পরীক্ষানিরীক্ষা না-করেই বিদেশ থেকে চাকা আমদানি করার দিকে পা বাড়ানো হয়েছে। একই ভাবে এখন চাকা তৈরির জন্য নতুন কারখানা নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। অথচ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, যথেষ্ট পরীক্ষানিরীক্ষা করলে দেশের চালু পরিকাঠামোতেই রেলের জন্য উন্নত মানের চাকার পর্যাপ্ত উৎপাদন সম্ভব।
তবে রেল সূত্রের খবর, আগামী দিনে দেশে প্রায় দু’লক্ষ চাকার চাহিদা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন আধিকারিকেরা। তার মধ্যে সেলের কারখানা থেকে প্রায় এক লক্ষ চাকা জোগান দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই অবস্থায় বাকি আরও ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ চাকার জন্য বেসরকারি সংস্থাকে চাকা তৈরির কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।