তাপস সাহা। শুক্রবার কলকাতার সিবিআই দফতরে। —নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ফের সক্রিয় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তলবে শুক্রবার বেলায় সিবিআই দফতর নিজাম প্যালেসে গেলেন নদিয়া জেলার তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ সিবিআই দফতরে পৌঁছন বিধায়ক। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমায় আবার ডাকা হয়েছিল। তদন্তে সহযোগিতা করব।” তার পরই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে সিবিআই দফতরের ভিতরে ঢুকে যান তিনি। তাপসের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য জানান, বিধায়কের কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার জন্য তলব করা হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তাপস আগের মতোই তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলে জানান তাঁর আইনজীবী। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে দুপুর ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে যান তাপস।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাপসের বিরুদ্ধে। এই মামলায় আগেও তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে তাপসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগের জেরেই ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তাপসের তেহট্টের বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ১২ জন আধিকারিক তল্লাশি করেন তাপসের বাড়ি, তাঁর আপ্তসহায়কের বাড়ি, এমনকি বাড়ির পাশের পুকুরপাড়েও।
তবে প্রায় ১৫ ঘণ্টার ওই অভিযানের পর তাপসের বাড়ি থেকে কিছু নথি পাওয়া গেলেও তাপসকে গ্রেফতার করেনি সিবিআই। পরে তাপস দাবি করেছিলেন, সিবিআই তাঁকে বলেছে, তিনি নাকি ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার’। যদিও সিবিআই সূত্রে এই দাবির কোনও সত্যতা মেলেনি। এর মধ্যেই তাপসকে কলকাতায় ডেকে পাঠায় সিবিআই। তলব পেয়ে সেই সময়ও নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি।
স্কুল ও সরকারি দফতরে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার অভিযোগ ওঠায় এর আগে তাপসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রবীর কয়ালকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার তদন্তে অসন্তোষ জানিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূলের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য। বিজেপির আইনজীবী নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারির মামলায় তাপসের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। ঘটনার শুরুতেই নড়েচড়ে বসে সিবিআই, পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে গতি হারায় তদন্ত। লোকসভা নির্বাচন মিটতেই ফের তাপসকে তলব করা হল। এর আগে তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, তাপসের নির্দেশেই বাজার থেকে টাকা তুলেছিলেন প্রবীর। তাপস অবশ্য দাবি করেছিলেন, ‘নব্য তৃণমূল’ তাঁকে ফাঁসিয়েছে। কিন্তু দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে রয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।