এ ভাবেই জুতোপেটা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
হাতে টাকাপয়সা বিশেষ ছিল না। কিন্তু খেলায় ধরতে হবে বাজি। অভিযোগ, তাই ঠিক হয়, চার জনের খেলায় যে হারবে তাকে বাকিরা জুতোপেটা করবে। আরও অভিযোগ, হেরে গিয়ে তিন নাবালকের হাতে মার খেল চতুর্থ নাবালক। এই মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। অভিযোগ, ওই ঘটনার প্রতিবাদ করায় আহত নাবালকের বাবা-মাকে মারধর এবং অ্যাসিড ছুড়ে মারার হুমকি দিয়েছে অভিযুক্ত নাবালকদের পরিবার। এর পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হয় আক্রান্ত নাবালকের পরিবার।
ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানা এলাকার একটি গ্রামের। স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার বিকেলে ১৩-১৬ বছর বয়সি ওই চার কিশোর একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে মোবাইল গেম খেলতে যায়। অনলাইন যুদ্ধের একটি গেমে তারা চার জনের একটি দল তৈরি করে খেলা শুরু করেছিল। শর্ত ছিল, যে হারবে তাকে বাকিরা ১০ বার করে মোট ৩০ বার জুতোপেটা করবে। সেই ঘটনা মোবাইলে ‘ভিডিয়ো রেকর্ড’ করা হবে। ১৩ বছরের এক নাবালক খেলায় হেরে যায়। অভিযোগ, এর পরেই বাকিরা তাকে জুতো দিয়ে বেধড়ক পেটায় এবং তা ক্যামেরাবন্দি করে। মার খেয়ে সেখানেই পড়ে যায় আক্রান্ত নাবালক। বেগতিক দেখে বাকিরা পালিয়ে যায়। পরে অন্যদের থেকে খবর পেয়ে ওই নাবালককে উদ্ধার করে এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান তার আত্মীয়েরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অতিরিক্ত মারধরের ফলে মাঝে মধ্যেই রক্তবমি করছে আহত নাবালক। আহতের বাবা বলেন, ‘‘ছেলের নিজের স্মার্টফোন নেই। ও ওই গেমের বিষয়ে খুব একটা জানত না।’’ আহতের বাবার দাবি, ওই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁদেরও মারধর করে অ্যাসিড ছুড়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়। এর পরেই তিনি মোট পাঁচ কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অনলাইন গেম খেলছিল, এমন তিন জন ছাড়াও আরও দুই নাবালক সেখানে উপস্থিত ছিল বলে দাবি। পুলিশ সূত্রের খবর, চার অভিযুক্তকে পুলিশ রাতেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরিবারকে মারধরের অভিযোগে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন অনেকেই। তমলুকের মনোবিদ অলোক পাত্র বলেন, ‘‘এখন ছোটদের কাছে স্বাভাবিক আনন্দের বিষয়গুলি কমে যাচ্ছে। তাই ওরা ইন্টারনেটে গেম খেলছে। আসক্তও হচ্ছে। এ থেকে এই ধরনের বিকৃত রুচি তৈরি হচ্ছে।’’