প্রতীকী ছবি।
অভাবের সংসার। বাবা টোটো চালিয়ে সামান্য রোজগার করেন। মা চেয়েছিলেন, মেয়েকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে। কিন্তু ষোলো বছরের মেয়ের স্বপ্ন তো অন্য। সে ভালবাসে পড়াশোনা। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সাফল্যের আত্মবিশ্বাসী উড়ান দিতে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সে নিজেকে প্রস্তুত করছে। তাই সে প্রতিবাদ জানায়। রুখে দেয় বিয়ে। এই লড়াইয়ে অবশ্য বাবাকে পাশে পেয়েছে পায়েল।
পরিবারের অনেকে প্রবল চাপ তৈরি করেও কিন্তু কিশোরীকে ভয় দেখাতে পারেনি। সে অটল থেকেছে সিদ্ধান্তে। রানাঘাটের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পায়েল চক্রবর্তীর লড়াইকে গত বুধবার কৃষ্ণনগরের এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে। সংবর্ধনা পেয়েছে পায়েল।
রানাঘাট ১ ব্লকের আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা পায়েল চক্রবর্তী আনুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ছোট থেকেই তার ইচ্ছে, উচ্চশিক্ষার পর চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। কিন্তু স্বপ্নপূরণে বাধ সাধেন মা, দিদা-সহ মামার বাড়ির অনেকে।
পায়েল বলে, ‘‘গত অগস্ট মাসের মাঝামাঝি ভুল বুঝিয়ে আমাকে রানাঘাটে থানাপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানতে পারি যে, আমাকে বিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত পাকা। শেষ মুহূর্তে স্কুলের প্রধানশিক্ষকের সাহায্যে বিয়ে ভেঙে দিই। তখন থেকেই মা, দিদা আমাকে বিয়ের জন্য জোর করতে থাকেন। মামাবাড়িতেই আমাকে ঘরবন্দি করে তালা দিয়ে প্রায় এক মাস রাখা হয়। তার পর আবার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। সুযোগ বুঝেই এক দিন মামাবাড়ি থেকে পালিয়ে বিডিও স্যারের সঙ্গে দেখা করে সব কথা জানাই। বাবা আমাকে কখনও বিয়ে দিতে চাননি। বাবার সঙ্গেই এখন আছি।’’
পায়েলের বাবা সমরেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অল্প বয়সে কোনও দিন মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইনি। ও যতদূর পড়াশোনা করতে চায় কষ্ট করে হলেও আমি ওকে পড়াব।’’
রানাঘাট-১ এর বিডিও সঞ্জীব সরকার বলেন, ‘‘ওই পরিবারের প্রতি সব সময় নজর রয়েছে। পায়েল এখন ওর বাবার সঙ্গে থাকছে। সেই জায়গাটি ওর দিদার দেওয়া। ফলে মামাবাড়ির লোকজন চাইছে, ওই জায়গা থেকে ওদের তুলে দিতে। তাই রানাঘাটের মহকুমাশাসক ও পুলিশ আধিকারিকদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’
ঘটনার পর থেকে পায়েলের মা বাপের বাড়িতেই আছেন। তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পায়েল অবশ্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। চোয়াল শক্ত করে বলেছে, “মেয়েদেরও একটা নিজস্ব জীবন আছে, স্বাধীনতা রয়েছে, স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে। চাইলেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দেওয়া যায় না।’’