ফাইল ছবি
প্রথমে চাপটা ছিল শুধু শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি বা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। পরে তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা জানিয়ে দিয়েছে, তারাও চায়, আসন্ন সিমেস্টারের পরীক্ষা হোক অনলাইনে। প্রথমে অফলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলেও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শাসক শিবিরের ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠনের এই জোড়া চাপে এখন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দিকেই যাচ্ছে বলে শিক্ষা সূত্রের খবর। মত বদলে বহু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পরীক্ষার ঝোঁক দেখালেও যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতীর মতো বিশ্ববিদ্যালয় এখনও অফলাইন পরীক্ষাতেই অনড়।
দীর্ঘ অতিমারি পর্বের পরে আসন্ন সিমেস্টারের পরীক্ষা অফলাইন না অনলাইনে নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। আগে অফলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলেও রবিবার তা বদলে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কল্যাণী ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ এবং অন্যান্য মহলের চাপেই এমন পরিবর্তন বলে শিক্ষাজগতের একাংশের দাবি। এ দিন এই বিষয়ে কর্মসমিতির জরুরি বৈঠক ডাকেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সহ-উপাচার্য গৌতম পাল জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্নাতক স্তরে লিখিত পরীক্ষা হবে অনলাইনে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও আগের সিদ্ধান্ত পাল্টে স্নাতক স্তরের আসন্ন সিমেস্টারের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে অনলাইন পরীক্ষার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। রাজ্যের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির টিএমসিপি ইউনিটও এই একই বিষয়ে লিখিত অনুরোধ জানায়। ওয়েবকুপার সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসুর বক্তব্য, করোনার অন্যতম ভেরিয়্যান্ট ওমিক্রনের আচমকা সংক্রমণে এই সিমেস্টারের পড়াশোনা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এ বারের পরীক্ষা অনলাইনেই নেওয়া হোক। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অনলাইন পরীক্ষার পথেই হাঁটবেন বলেই মনে করছে শিক্ষা মহলের একটি অংশ।
পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার দাবিতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষার পড়ুয়ারা বার বার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী জানিয়েছিলেন, দূরশিক্ষা-সহ সব পরীক্ষাই নেওয়া হবে অফলাইনেই। শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, শিক্ষা কেন্দ্রে সশরীরে হাজির হয়ে চিরাচরিত প্রথায় পরীক্ষা নেওয়ার সেই সিদ্ধান্তে রবীন্দ্রভারতী কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত অটল থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয় দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে অফলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েও আবার অনলাইন পরীক্ষার দিকে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় অনাবশ্যক এবং নানা অজুহাতে অনলাইন ক্লাস হয়েছে। পড়ুয়াদের স্বার্থেই অফলাইন ক্লাসের পাশাপাশি সশরীরে ক্যাম্পাসে বসেই পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।’’
পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে, সেই বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা এই সপ্তাহে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (কুটা) অফলাইন পরীক্ষারই দাবি জানাচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংখ্যায়ন চৌধুরী বলেন, “অফলাইন পরীক্ষা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের যথার্থ মূল্যায়ন হয় না। আর এখন যা পরিস্থিতি, তাতে অফলাইনে পরীক্ষা নিতে কোনও অসুবিধাও নেই।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও (জুটা) প্রথম থেকেই অফলাইন পরীক্ষার পক্ষে। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বোর্ড অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টিএমসিপি-র অনলাইন পরীক্ষার যে-দাবি তুলেছে, তার প্রেক্ষিতে জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘যাদবপুরে যে-ভাবে অনলাইনে পরীক্ষা হয়, তা গণটোকাটুকির শামিল। ওই পরীক্ষা প্রহসন ছাড়া কিচ্ছু না। আমরা অফলাইন পরীক্ষাই চাই।’’