প্রতীকী চিত্র।
চলতি বছরে যাঁদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল, পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় তাঁদের মূল্যায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। কিন্তু আগামী বছর যাঁদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা, পরীক্ষা বাতিলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁদের মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, এখন থেকে তার সম্ভাব্য ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব দিচ্ছেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের অ্যাক্টিভিটি টাস্কের সঙ্গে নম্বর দিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হোক। অন্যথায় পরীক্ষা বাতিল হলে কী ভাবে মূল্যায়ন হবে, সেই প্রশ্নটি আবার বড় হয়ে উঠতে বাধ্য।
স্কুলের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা এখনই বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। তার পরে আবার কোনও ঢেউ আসবে কি না, কেউ জানে না। যদি আগামী বছরেও করোনা পরিস্থিতি একই রকম থাকে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন কিন্তু মূল্যায়ন নিয়ে ফের সমস্যা হবে। এখন থেকে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের সঙ্গে নম্বর দেওয়া হলে এই মূল্যায়ন-ব্যবস্থাই তখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষকদের সাহায্য করবে।
প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, অতিমারিতে গ্রামাঞ্চলের স্কুলপড়ুয়ারা সব চেয়ে বেশি উপেক্ষিত। তাঁদের মূল্যায়নের একমাত্র উপায় অ্যাক্টিভিটি টাস্কের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া। হাওড়ার দুইল্যা পাঁচপাড়া স্কুলের শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, “গত বার অ্যাক্টিভিটি টাস্কের মাধ্যমে পড়ুয়াদের প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও নম্বর দেওয়া হয়নি। কারণ, সেই ব্যবস্থা ছিল না। শিক্ষা দফতর সেই ধরনের কোনও নির্দেশ দেয়নি। এ বার শিক্ষা দফতর যদি অ্যাক্টিভিটি টাস্কের সঙ্গে নম্বর দিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দেয়, তা হলে পড়ুয়ারাই উপকৃত হবে।”
শুধু গ্রাম বা মফস্সল নয়, প্রায় একই কথা বলছেন কলকাতার দু’টি স্কুল, বেলতলা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় এবং গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ, টাকি হাউসের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক। তাঁরা জানান, স্কুলের তরফে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এমনকি অভিভাবকদের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠিয়ে তার উত্তর লিখতে বলা হয়েছে পড়ুয়াদের। কিন্তু শিক্ষা দফতর থেকে কোনও নির্দেশ না-থাকায় সব সময় নম্বর দিয়ে মূল্যায়ন হয়নি। বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির প্রশ্ন, আগামী বছর যারা মাধ্যমিক দেবে, তারা অতিমারি পরিস্থিতির কারণে কেউ নবম থেকে দশমে ওঠার পরীক্ষা দেয়নি। তা হলে কোনও কারণে আগামী বছর পরীক্ষা না-হলে কি তাদের অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার উপরে মূল্যায়ন হবে?
চিন্তিত আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের একটি স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবক রাজীব সরকার বলেন, “আগামী বছর আমার ছেলে সোমরাজ মাধ্যমিক দেবে। আমরা দু’জনেই চাইছি, পরের বার যেন এমন সমস্যা না-হয়। সেই জন্য ওদের নম্বর দিয়ে মূল্যায়নের কাজ এখন থেকে শুরু করে দেওয়া হোক।”
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমরা জুন থেকে মিড-ডে মিলের জিনিসপত্রের সঙ্গেই স্কুলগুলিকে অ্যাক্টিভিটি টাস্ক দিয়ে দিতে বলেছি। মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে।”