শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সরকারের ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে দাবিদাওয়া নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন বিভিন্ন গোত্রের শিক্ষকেরা। রবিবার ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তাঁদেরই সভায় গিয়ে সেই সংগঠনকেই তৃণমূলের স্বীকৃতি দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, ভোটে জিতে সরকার গড়লে ধাপে ধাপে শিক্ষকদের দাবি পূরণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘শিক্ষকদের দাবি অনুসারে কাজ এগোচ্ছে। যেটুকু বাকি আছে সেটুকু নিশ্চয় সরকার গঠনের পরে হবে। যোগ্যতা অনুসারে শিক্ষকদের দাবি ধাপে ধাপে পূরণ করা হবে। ভাতা বৃদ্ধিও ধাপে ধাপে হবে। আমরা শিক্ষকদের প্রতি খুবই সংবেদনশীল।’’
শিক্ষামন্ত্রীর এই আশ্বাসে অবশ্য ওই সভায় উপস্থিত বহু শিক্ষকই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এ দিনের শিক্ষক সম্মেলনে পার্শ্ব শিক্ষক, এসএসকে এমএসকে শিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু, সাহায্যপ্রাপ্ত নয় এমন মাদ্রাসার শিক্ষক, কারিগরি শিক্ষক-সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষকেরা ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁদের অনেকে। শিক্ষকদের একটি সংগঠনকে তৃণমূলের অনুমোদনের বিষয়টি নিয়েও অনেকে আপত্তি তোলেন।
পার্থবাবু তাঁর বক্তব্যে জানান, পার্শ্বশিক্ষকদের বার্ষিক বেতনের তিন শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হয়েছে। সেই সঙ্গে অবসরকালীন একসঙ্গে তিন লক্ষ টাকা পাচ্ছেন শিক্ষকরা। এসএসকে এমএসকে শিক্ষকদের শিক্ষা দফতরের অধীনে আনা হয়েছে। তাঁরাও নানা রকম সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন। মাদ্রাসার দাবির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনি জানিয়েছেন। কারিগরি শিক্ষকদেরও দাবিগুলি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে পার্থবাবু জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে বামেদের আমলে। পার্থবাবু বলেন, ‘‘কৃষ্ণের শতনামের মতোই বামফ্রন্ট আমলে নানা ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। যাঁদের অনেকের এখন কোনও ভূমিকাই নেই। যোগ্যতা অনুযায়ী তাঁদেরও দাবি পূরণ করা হচ্ছে।’’
শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগের উত্তরে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁর জেনে রাখা উচিত, বিভিন্ন রাজ্যেই সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় পার্শ্ব-শিক্ষক, এমএসকে, এসএসকে-সহ নানা ধরনের শিক্ষক নেওয়া হয়েছিল। শুধু বাংলায় নয়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এঁদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলোর কী হল? শিক্ষকেরা তো সেই প্রতিশ্রুতির কথাই জানতে চাইছেন। সরকারে থাকলে দায়িত্ব নিতে জানতে হয়!’’
সুজনবাবুর আরও প্রশ্ন, ‘‘অতিথি শিক্ষক বা সিভিক ভলান্টিয়ারের মতো যাঁদের এই জমানায় নিযোগ করা হয়েছে, তাঁদের অবস্থা সব ঠিক আছে তো? দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলতে পারবেন?’’ সভায় উপস্থিত বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের এক জন বলেন, ‘‘আর কত ধাপে ধাপে প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাস দেবেন শিক্ষামন্ত্রী? ভোটের পরে প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা বললেন কিন্তু ওঁরা ভোটে জিতবেন তো? এর আগেও বিধানসভা ভোটের সময় একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’’ পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন, ‘‘বেতন কাঠামোর কথা এক বারও বললেন না শিক্ষামন্ত্রী। আমরা শোষণের রাজনীতির শিকার। আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বুথে বুথে প্রচারে নামব।’’