প্রতীকী ছবি।
বাড়ির কাছাকাছি যেতে বা স্রেফ স্কুল বদলের জন্য অনেক শিক্ষক নতুন করে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষায় বসেছিলেন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বদলির সুযোগ পেলেন, কিন্তু তাঁদের বেতন গেল কমে! রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের যে-সব অনার্স গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক স্কুল বদলের জন্য নতুন করে এসএসসি-র পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই এই অভিযোগ করছেন।
ওই শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন স্কুলে বদলির পরে তাঁরা ‘পে প্রোটেকশন’ তো পাচ্ছেনই না। উল্টে তাঁদের বেতন শুরু হচ্ছে নবাগত পাশ গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের বেতনক্রমে। ফলে তাঁরা অভিজ্ঞতার দাম পাচ্ছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, এত দিন ধরে অনার্স গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকের বেতন পেয়ে এখন তাঁরা তা পাবেন না কেন? কেন মিলবে না অভিজ্ঞতার দাম?
কয়েক হাজার অনার্স গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক বদলি নিতে গিয়ে এই সমস্যায় পড়েছেন। ওই শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বাড়ির কাছের স্কুলে আসতে ইচ্ছুক বলেই তাঁরা ফের পরীক্ষায় বসেন। সাধারণ বদলির জন্য আবেদন করলে সেই বদলি কবে হবে, আদৌ হবে কি না, অনিশ্চিত। তাই তাঁরা নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে না-থেকে নতুন করে এসএসসি-র পরীক্ষা দেন। যাঁরা সেই পুনঃপরীক্ষায় পাশ করলেন, তাঁদের অভিযোগ, বাড়ির কাছে স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, বেতন এক ধাক্কায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কমে গিয়েছে।
কিছু শিক্ষক জানান, তাঁদের কারও কারও ১০ বছর স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আছে, কেউ কেউ পড়াচ্ছেন তারও বেশি সময় ধরে। বদলির পরে তাঁদের অনেকেরই বেতন ১০-১৫ হাজার টাকা কমে গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “আমার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। পড়াতাম নদিয়ার একটি স্কুলে। বাড়ির কাছের কোনও স্কুলে আসার আশায় ফের এসএসসি-র পরীক্ষায় বসলাম। পাশও করলাম। কিন্তু নতুন স্কুলে যোগ দিয়ে দেখলাম, বেতন কমে গিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।’’ ওই শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের অভিজ্ঞতার দাম দিতে হবে। তাঁদের ‘গ্রেড পে’ যদি কমাতেও হয়, বেতনের অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রেখে অন্তত বেতনের সামঞ্জস্যটুকু রক্ষা করা হোক।
অনার্স গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের এই বেতন-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “যে-সব অনার্স গ্র্যাজুয়েট ‘স্পেশাল গ্রাউন্ড’ বা বিশেষ কারণে বদলি হচ্ছেন, তাঁদের বেতন কিন্তু কমছে না। যাঁরা ফের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে নতুন স্কুলে যেতে চাইছেন, বেতন কমছে শুধু তাঁদের। আমরা চাই, শিক্ষা দফতর ওই শিক্ষকদের ‘পে প্রোটেকশন অ্যান্ড সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন’ বা বেতন-সুরক্ষা ও চাকরির ধারাবাহিকতার ব্যবস্থা করে তাঁদের বঞ্চনার সুরাহা করুক।” এই বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি এসএমএসেরও।