মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ভেঙে পড়েছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি বারবারই বলেছেন, সমস্ত শেষ! তাঁর মানসম্মান (রেপুটেশন) সমস্ত নষ্ট হয়ে গেল। শনিবার ইডির একটি সূত্রে তেমনই দাবি করা হয়েছে। যদিও এই বক্তব্যের কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন সংস্থা সূত্রে করা হয়নি। ইডির ওই সূত্র আরও জানাচ্ছে, গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত পার্থের মধ্যে তেমন কোনও অসুস্থতা দেখা যায়নি। তবে মানসিক ভাবে তিনি যথেষ্ট ভেঙে পড়েছেন।
শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ পার্থের নাকতলার বাড়িতে গিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা পার্থকে গ্রেফতার করেন। অর্থাৎ, টানা প্রায় ২৭ ঘণ্টা জেরার পর। পার্থ তদন্তে ‘সহযোগিতা’ করছিলেন না বলেই তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে। যা সাধারণত কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার কারণ হিসাবে দেখানো হয়।
তবে ইডিরই একটি সূত্র বলছে, পার্থকে জেরার পর প্রাথমিক ভাবে তথ্যসংগ্রহ করে আধিকারিকরা চলে আসতেন। যদি না তাঁদের নজর পড়ত কয়েকটি দলিলে। প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এসএসসি দুর্নীতির তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকেও একাধিক বার জেরা করেছে। বস্তুত, মানিকের বাড়িতে শুক্রবারেও তল্লাশি চালিয়েছেন ইডির আধিকারিকেরা। তাঁরা কিন্তু মানিক-সহ কাউকেই গ্রেফতার করেননি। রাতের দিকে ইডির আধিকারিকেরা মানিকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বলে যান, ইডিকে না-জানিয়ে যেন মানিক কোথাও না-যান।
একই রকম ভাবে বাকি যাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে, তাঁদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি ইডি। নথিপত্র সংগ্রহ করে, সেই নথির তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে ইডির তদন্তকারীরা ফিরে যান।
তা হলে পার্থকে কেন গ্রেফতার করা হল?
ইডির একটি সূত্রের বক্তব্য, মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে টাকার পাহাড় উদ্ধার হওয়ার পর পার্থকে গ্রেফতার না-করে উপায় ছিল না। কারণ, ইডির একটি সূত্র বলছে, অর্পিতা জেরায় পরিষ্কার জানিয়েছেন যে ওই টাকা পার্থই তাঁকে রাখতে দিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে যদিও এর সত্যতা ইডি স্বীকার করেনি। সূত্রের দাবি, তার পরেই ইডির আধিকারিকরা আরও আটঘাট বেঁধে পার্থকে জেরা করা শুরু করেন। কলকাতার আধিকারিকেরা যোগাযোগ করেন দিল্লিতে সদর দফতরের সঙ্গে। সারা রাত তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। শেষপর্যন্ত ঠিক হয়, হিসাব-বহির্ভূত এবং আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ওই বিপুল অর্থ উদ্ধারের ‘দায়’ মন্ত্রী পার্থেরই। ফলে তাঁকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি টাকার হদিস পেতে হবে। তদন্তের স্বার্থেই পার্থকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন।
যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে সংস্থা সূত্রে এর সত্যতা স্বীকার করা হয়নি।
এখন প্রশ্ন, কোন সূত্রে অর্পিতার হদিস পেলেন ইডির আধিকারিকেরা? সূত্রের দাবি, পার্থের বাড়িতে তল্লাশির সময় তদন্তকারীরা কিছু দলিলের হদিস পান। সেই দলিলের সূত্র ধরেই হদিস মেলে অর্পিতার। তার পরেই অর্পিতার ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। সেখানে তল্লাশি চালাতেই বেরিয়ে আসে টাকার পাহাড়। সেই বিপুল পরিমাণ অর্থের সূত্র ধরে অর্পিতাকে জেরা করতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই বেরিয়ে আসে পার্থের যোগাযোগের কথা। ইডির একটি সূত্রের দাবি, একটা সময়ে সমান্তরাল ভাবে ফোন ‘অন’ রেখে দু’জনের জেরার মুখে বলা বক্তব্য মিলিয়েও দেখা হয়। রাতভর জেরা করার পর পার্থকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেন ইডির তদন্তকারীরা। পার্থকেও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যা শুনে দৃশ্যতই ভেঙে পড়েন রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী। বারংবার বলতে থাকেন, তাঁর মানসম্মান সমস্ত নষ্ট হয়ে গেল!