অভিযুক্ত মইদুল ইসলাম। সোমবার লালবাজারে। —নিজস্ব চিত্র
চার বছর আগেকার টেট (প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা) নিয়ে দুর্নীতি তিনিই ফাঁস করেছিলেন বলে এক শিক্ষকের দাবি। ২০১৫ সালের টেটের প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সেই শিক্ষককেই সোমবার লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করল পুলিশ।
পুরো বিষয়টিতে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে শিক্ষার কোনও কোনও শিবির। মইদুল ইসলাম নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির হেলিয়াগাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে জেলা জু়ড়ে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছিলেন। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত তিনি। ওই শিক্ষকের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর গোটা রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য টেট নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, টেটের প্রশ্নপত্র আগেই বাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই চুরি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্তে নামে গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশ্যাল সেল।
১১ অক্টোবর পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা আগে একটি টিভি চ্যানেলের অফিসে প্রশ্নপত্র পৌঁছে গিয়েছিল। তার প্রতিলিপি গড়িয়াহাট থানায় জমা দেন ওই চ্যানেলের প্রতিনিধি। প্রথমে পুলিশ সেই প্রতিলিপি পাঠায় শিক্ষা দফতরের কাছে। পরে চ্যানেলের তরফে সেই প্রতিলিপি পাঠানো হয় শিক্ষাসচিবের কাছেও।
প্রাথমিক ভাবে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশ প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তাঁরা দাবি করেন, হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এটা সাইবার অপরাধ হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নয়। পরবর্তী কালে এই বিষয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। এই বিষয়ে দু’মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে বলে আদালতে জানায় সরকার পক্ষ। আর আদালত জানায়, রাজ্য সরকারকে ২৩ নভেম্বর হলফনামা পেশ করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে গোয়েন্দা তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তাই টেটের ফলও আটকে আছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে না। সেই ঘটনাতেই এ দিন ডেকে পাঠানো হয় ওই শিক্ষককে। বেলা ২টো নাগাদ লালবাজারে যান মইদুল ইসলাম। পরে তিনি বলেন, ‘‘২০১২ সালের টেটের প্রশ্নপত্র নিয়ে দুর্নীতি আমিই ফাঁস করেছিলাম। তাই এখন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’’
কী বলছে পুলিশ?
‘‘তদন্তের জন্য মইদুলকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়,’’ বলেন লালবাজারের এক পদস্থ কর্তা।