খেলায় মেতেছে পড়ুয়ারা। ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
করোনা আবহে প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ থেকে শুরু হয়েছিল পাড়ায় শিক্ষালয়। দিন কয়েক পরেই শ্রেণীকক্ষের দরজা খোলা হলেও ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার খুব বেশি ছিল না। তখনই সমস্ত পড়ুয়াদের শিক্ষালয়ে হাজির করতে শিক্ষারত্ন পুরস্কারের প্রাপ্ত টাকায় পড়ুয়াদের জন্য খেলনা সামগ্রী কিনলেন হরিহরপাড়ার ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম অধিকারী। শুধু তা-ই নয়, পড়ুয়াদের যাতে পড়ায় আগ্রহ বাড়ে তার জন্য বিভিন্ন ধরনের বইও কিনেছেন তিনি। ওই বই ঠাঁই পেয়েছে স্কুলের লাইব্রেরিতে। ক্লাস শেষে, টিফিন পিরিয়ডে খেলার পাশাপাশি গল্পের বইও পড়ছে খুদে পড়ুয়ারা।
জানা গিয়েছে, অসীমবাবু ২০২১ সালে রাজ্য সরকারের শিক্ষারত্ন পুরস্কার পান। ওই পুরস্কারের অর্থ মূল্য ২৫ হাজার টাকা পড়ুয়াদের জন্যই খরচ করতে উদ্যোগী হন তিনি। অসীমবাবু বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের জন্যই আমি এই পুরস্কার পেয়েছি। ফলে তাদের কথা মাথায় রেখেই তাদের পড়ায় আগ্রহ বাড়াতেই আমি উদ্যোগী হয়েছি।’’ স্কুল খুলতেই বনভোজনের আমেজে মিডডে মিল খাওয়ার পরেই পড়ুয়ারা ব্যস্ত হয়ে পড়ছে খেলাধুলোয়। এখন স্কুলে গেলে দেখা যায়, কেউ দোলনায় দোল খাচ্ছে, কেউ আবার অন্য খেলনাপাতি নিয়ে ব্যস্ত খেলায়। কেউ কেউ আবার ব্যস্ত ঈশপের গল্প, নন্টে-ফন্টে পড়তে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়াই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। অনেকের বাবা-মা ভিন্ রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। অনেকের বাড়িতে তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও পড়া দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই। ফলে, দীর্ঘ প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকেই পড়ায় আগ্রহ হারিয়েছিল। কেউ কেউ আবার স্কুল আসতেও চাইছিল না। সমস্ত পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করার পাশাপাশি পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়াতে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গল্প, কার্টুনের বই। স্কুলের শিক্ষকেরাও জানাচ্ছেন, এভাবেই ছবি, কার্টুন দেখে বইয়ের প্রতি আগ্রহও তৈরি হচ্ছে খুদে পড়ুয়াদের। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া অঙ্কিতা বল, তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সুখেদা খাতুন, হালিম শেখরা জানাচ্ছে, নতুন খেলনা পেয়ে ভাল লাগছে। সুখেদা বলে, ‘‘টিফিনের সময় খেলছি, গল্পের বই পড়ছি।’’ মুকুল শেখ নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন বাদে স্কুল খুললেও ছেলে প্রথম দিকে স্কুলে যেতে চাইছিল না। স্কুলে নতুন খেলনা এসেছে শুনে এখন নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে।’’ অভিজিৎ ঘটক নামে অপর এক অভিভাবক বলেন, ‘‘খেলনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গল্পের বই ছেলেমেয়েদের নিয়মিত স্কুলে আসা ও পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছে।’’ আরও বেশ কিছু আউটডোর গেমের সরঞ্জাম ও বই কেনার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান প্রধান শিক্ষক। হরিহরপাড়ার বিডিও রাজা ভৌমিক বলেন, ‘‘ওই স্কুল ব্লকের একটি অন্যতম ব্যতিক্রমী স্কুল। প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’’