— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দু’মাস আগে চা বাগান ছেড়েছেন ম্যানেজার। শ্রমিকদের দাবি, তার পরে কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ পা রাখেননি আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের ঢেকলাপাড়া চা বাগানে। শ্রমিকেরা আশায় আশায় রোজ বাগানে যান। গাছের পরিচর্যা করেন। আর করেন অপেক্ষা। কবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউটে বেতন আসবে?
ডাকার পরেও অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে অর্থাভাবে বিকল্প গাড়ি জুটিয়ে হাসপাতালে যেতে না পারায় বৃহস্পতিবার মারা গিয়েছেন বাগানের শ্রমিক সুশীল ওরাওঁ (৪১)। শনিবার দুপুরে চা সুন্দরী প্রকল্পে পাওয়া নতুন নীল-সাদা বাড়ির বাইরে বসে সুশীলের স্ত্রী সুকুরমণি ওরাওঁ জানান, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন তাঁর স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘ওষুধ কিনতে পারিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার গাড়ি ডাকার মতো টাকা নেই। বাড়ির রোজগেরে লোকটাই থাকল না! এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আরও দুই মেয়ে আছে। ওদের কী হবে, জানি না! কী ভাবে সংসার চলবে, ভেবে পাচ্ছি না!’’
পেট চালাতে বাগানের শ’তিনেক শ্রমিকের ভরসা রেশনের চাল, আশপাশের জঙ্গল থেকে আনা ঢেঁকি শাক ও কচু শাক। সংসার টানতে বহু শ্রমিক নদীতে পাথর ভেঙে, বালি তুলে বা দিনমজুরি করে কোনও রকমে রোজগার করছেন। তাঁরা জানান, অবৈধ ভাবে বালি তোলায়, পাথর ভাঙায় বন দফতরের কড়াকড়ি থাকায়, সে কাজও সব সময় মিলছে না। শ্রমিকদের বেতন বন্ধের প্রভাব পড়েছে বাড়ির ছোটদের পড়াশোনাতেও। কয়েক জনের কথায়, ‘‘দু’মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। ছোটরা বাড়িতেই পড়ছে।’’
বাগানের শ্রমিক স্বপন সমজারের দাবি, ‘‘ম্যানেজার চলে যাওয়ার পরে দু’মাস বেতন পাইনি। খাবারের টাকা নেই, চিকিৎসা মিলবে কোথায়!’’ এলাকাবাসীর ক্ষোভ, দিন কয়েক আগে চা বলয়ে প্রশাসনিক কর্মসূচিতে এসে বন্ধ ছ’টি চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ভাতার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘সরকারি ভাবে আমাদের বাগান বন্ধ নয়। তা হলে কোথা থেকে টাকা পাব?’’
সুশীল ওরাওঁয়ের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতে বাগানে পা পড়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির নেতাদের। তবে বাগানের শ্রমিক মহল্লার বক্তব্য, ‘‘আশ্বাসে পেট ভরে না। বকেয়া টাকা পেলে বেঁচে যাই।’’ বাগানের মালিক নিখিল কল্যাণীর দাবি, ‘‘শ্রমিকদের দু’মাস নয়, পনেরো দিনের বেতন বাকি। শীঘ্রই তা দেওয়া হবে।’’