প্রতীকী ছবি।
সাধারণের পাতে সব থেকে সহজলভ্য খাবার আলু। সেই আলুর দাম নিয়ে টালবাহানা যেন কমতেই চাইছে না। গত এক বছরে টানা কেজি প্রতি আলু গড়ে ২৮-৩০ টাকা ছিল। জানুয়ারির পরে তা কিছুটা কমলেও সম্প্রতি ফের আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ী মহলের দাবি, পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলুর দাম যেখানে ১৩ টাকা কেজি, সেখানে খুচরো বাজারে তা বিকোচ্ছে ২০ টাকায়। আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রী কয়েক বছর আগে টাস্ক ফোর্স কমিটি তৈরি করেছিলেন। সেই কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য, হঠাৎ আলু, পেঁয়াজ থেকে আনাজের দাম বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্ত অভিযোগ, মাসখানেক ধরে আলুর দাম বেড়ে গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এই টাস্ক ফোর্স।
সূত্রের দাবি, আলুর দামের বিষয়ে এত দিন অবহিতই ছিলেন না টাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে। রবিবার এ নিয়ে তাঁকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি ১৩-১৪ টাকা। খুচরো বাজারে বড় জোর ১৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। কিন্তু ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া মানে মাঝখানে ফড়েরা ঢুকে পড়েছে।’’ এ বিষয়ে শীঘ্রই এনফোর্সমেন্টের ডিজি-কে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আলুর দাম তো বেশ কিছু দিন আগে থেকে বেড়েছে। তা হলে এত দিন জানানো হয়নি কেন? এর কোনও সদুত্তর মেলেনি।
টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য কমল দে-র কথায়, ‘‘পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরো বাজারে আলুর দামের যে ফারাক, তা হওয়া একদম ঠিক নয়। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।’’
কলকাতা তো বটেই, গত কয়েক দিনে নানা জেলার বাজারেও আলুর দাম বেড়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম জেলায় বাজারে ১৮-২০ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। জেলার আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, খুচরো বাজারে ফড়ের দাপট বাড়ছে। গত সাত দিনে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের নানা বাজারেও কেজি প্রতি আলুর দাম এক থেকে দু’টাকা করে বেড়েছে। হুগলি বা বর্ধমানের মতো আলু উৎপাদক জেলাতেও খোলা বাজারে দাম ১৭-২০ টাকা।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায় জানান, এ বার রাজ্যে ৬৮ লক্ষ টন আলু মজুত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত হিমঘর থেকে খুব বেশি আলু বেরোয়নি। তা চালু হলে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। যেমন, বীরভূমে সম্প্রতি হিমঘর থেকে আলু বাজারে আসতে শুরু করায় দাম কমেছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের আবার মত, পুরোদমে হিমঘর খুলে গেলে ভিন্ রাজ্যে আলু রফতানি শুরু হবে। এখনই বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা-সহ ভিন্ রাজ্যে আলুর চাহিদা বাড়ছে। তাই খুচরো আলুর দাম নাগালে রাখতে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠেছে।
কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকদের যদিও দাবি, রাজ্য জুড়ে ঝড়-বৃষ্টির জন্য গত কয়েক দিনে আনাজের দাম বেড়েছে। তাই সাধারণ মানুষ আনাজের পরিবর্তে বেশি করে আলু কিনছেন। কিন্তু সমস্ত হিমঘর না খোলায় আলুর জোগানও কম পড়ছে। এর জেরেই দাম বাড়ছে। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে একাধিক বার ফোন করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও।