নদিয়ার তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা। ফাইল চিত্র।
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে তোলপাড় চলছে। উঠে এসেছে পুর-নিয়োগে দুর্নীতির প্রসঙ্গও। এ বার কি রাজ্য সিভিল সার্ভিস-সহ একাধিক সরকারি নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে চলেছে? সম্প্রতি নদিয়ার তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে দুর্নীতির অভিযোগের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। সেই মামলার সূত্রেই এই প্রশ্ন উঠে এসেছে।
তাপসের বিরুদ্ধে এত দিন তদন্ত করেছে রাজ্য দুর্নীতি-দমন শাখা (এসিবি)। গত বছরের মাঝামাঝি তিন জন গ্রেফতার হওয়ার পরে সেই তদন্ত আচমকা থমকে যায়। ওই তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, তাপসের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে পরিচিত প্রবীর কয়ালের বাড়িতে তল্লাশি করে গোয়েন্দারা রাজ্য আবগারি দফতর, কৃষি দফতরের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক-সহ বিভিন্ন সরকারি নিয়োগের নথি পেয়েছিলেন। তার মধ্যে রাজ্য সিভিল সার্ভিসের (ডব্লিউবিসিএস) এক পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড এবং বায়োডেটাও পেয়েছিলেন। নিম্ন আদালতে প্রবীরের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে সেই সব তথ্য পেশও করেছিলেন এসিবি-র তদন্তকারী অফিসার। সিবিআই তদন্তের নির্দেশনামায় বিচারপতি মান্থা সে সব বিস্তারিত উল্লেখও করেছেন। তাপসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসিবির কাছে জমা পড়েছিল, সেখানেও ডব্লিউবিসিএস-এর চাকরি পাওয়ার জন্য (পাবলিক সার্ভিস কমিশন এ ক্ষেত্রে নিয়োগ করে) টাকা দিয়ে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, তদন্তকারী অফিসার যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গেই তদন্ত করেছিলেন। কিন্তু তদন্ত থমকে গেল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এর আগে অভিযোগ উঠেছিল, ডব্লিউবিসিএস-এ প্রিলিমিনারি পর্যায়ে পাশ না-করেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসেছেন এবং চাকরিও পেয়েছেন কেউ কেউ। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। এসিবির তদন্তে উঠে আসা তথ্য ওই অভিযোগকেই জোরালো করে, মনে করছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে, সরাসরি সরকারি চাকরির দুর্নীতি সামনে আসতেই কি তাপসের বিরুদ্ধে তদন্ত থমকে যায়? যার জেরে এক বছর পরেও প্রবীরদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেনি এসিবি?
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তদন্ত শুরুর আগে এক প্রভাবশালীর কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত জোগাড় করেছিল এসিবি। চাকরির নামে কয়েক কোটি টাকা যে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা-ও জানতে পারেন তদন্তকারীরা। পরতে-পরতে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতির জাল কাটতেই সরকারি চাকরি সংক্রান্ত গোলমালের বিষয়টি সামনে আসে। তার পরেই তদন্ত আর এগোয়নি। সবুজ সঙ্কেত দেওয়া সেই প্রভাবশালীর নির্দেশেই তদন্ত থেমে গিয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট জানা যায়নি।