কুন্তল ঘোষের সঙ্গে টাকার লেনদেন নিয়ে মুখ খুললেন তাপস মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
চাকরির জন্য যাঁদের কাছ থেকে টাকা তোলা হত, তা তাপস মণ্ডলের অফিসে আনা হত। সেই টাকা তাপসের ‘নির্দেশ’ মতোই পৌঁছে যেত হুগলির তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষের কাছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এ বার এমন দাবিই করলেন মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ তাপস। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে টাকা লেনদেন সম্পর্কে এই কথা জানিয়েছেন তিনি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শনিবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল। গ্রেফতারের পর তাপসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের যুবনেতা। বলেছেন, ‘‘তাপস মণ্ডল ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। তা না দেওয়ায় আমার এই হাল।’’ কুন্তলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাপস।
টাকার লেনদেন প্রসঙ্গে তাপস বলেছেন, ‘‘চাকরির জন্য প্রার্থীরা আমার অফিসে টাকা দিয়ে যেতেন। সেই টাকা আমার নির্দেশেই কুন্তলের কাছে পাঠানো হত। এর সমস্ত হিসাব রয়েছে। এটা তো ঠিক, আমার কথাতেই টাকা সংগ্রহ করে তা পাঠানো হয়েছে ওকে। কিন্তু আমি টাকা নিইনি।’’ অর্থাৎ, চাকরির জন্য যে টাকা তোলা হত, সেই টাকা প্রথমে যেত বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপসের অফিসে। পরে তাপসের ‘নির্দেশ’-এই ওই টাকা কুন্তলের কাছে পাঠানো হত। কিন্তু তিনি কোনও টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন তাপস। তাঁর দাবি, ‘‘আমি টাকা দিয়েছি মানে, আমার লোকেরা টাকা দিয়েছেন। চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে টাকা আমার অফিসে আসত। সেই টাকা ওর (কুন্তল) কাছে পাঠাতাম।’’ এ জন্য কোনও কমিশন নেননি বলেও দাবি করেছেন তাপস।
গোপাল দলপতি, নীলাদ্রি ঘোষ, তাপস মিশ্রের নাম উঠে এসেছে এই মামলায়। এই তিন জন তাঁর পরিচিত বলে জানিয়েছেন তাপস। তাপসের দাবি, তাঁর নির্দেশেই গোপাল-নীলাদ্রিরা টাকা সংগ্রহ করে তা পাঠাতেন কুন্তলের কাছে। সেই টাকা ফেরতের জন্যই কুন্তলকে তিনি ‘ক্রমাগত চাপ’ দিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাপস। বলেছেন, ‘‘বার বার ওকে চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ফেরত দিতে বলেছিলাম।’’
শনিবার কুন্তল অভিযোগ করেছেন, সিবিআই-ইডির নাম নিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা চান তাপস। এই অভিযোগ খারিজ করেছেন মানিক-ঘনিষ্ঠ নেতা। বলেছেন, ‘‘নিজেকে বাঁচাতে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন। আমি কেন ওকে ভয় দেখাতে যাব? এ নিয়ে আর কিছু বলব না। সিবিআই-ইডি যা তদন্ত করার করবে।’’
টাকা নেওয়ার পর কুন্তল কাকে দিতেন, সে সম্পর্কে তাপস জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বার ওর কাছে জানতে চাই, কাকে টাকা দিয়েছ? কিন্তু কিছু জানায়নি। কারও নাম বলেনি।’’ যদিও গ্রেফতারের পর কুন্তল দাবি করেছেন, তিনি কোনও টাকা নেননি।
নিউ টাউনে কুন্তলের যে ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল, সেই ফ্ল্যাটে তাপস ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। এই দাবি অস্বীকার করেছেন মানিক-ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেছেন, ‘‘ওর ফ্ল্যাটে তাপস মিশ্র থাকতেন।’’ এই মামলায় তাপস মিশ্রকে খুঁজছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু কোথায় রয়েছেন তিনি, তা জানেন না তাপস মণ্ডল।