কুন্তলের কাছ থেকে একটি তথ্যসমৃদ্ধ ডায়েরি পাওয়া গিয়েছে বলে ব্যাঙ্কশাল আদালতে জানান ইডির আইনজীবী। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
যখন নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু হয়েছিল, তখন সেই দুর্নীতি ভারত মহাসাগরের মতো বড় মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে তা প্রশান্ত মহাসাগরের মতো বড়! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সদ্য গ্রেফতার হওয়া হুগলির তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে আদালতে তোলার পর এমনটাই দাবি করলেন ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। পাশাপাশি দাবি, তদন্তে নেমে ৩০ কোটির হদিস পাওয়া গিয়েছে। ধৃতের কাছ থেকে একটি তথ্যসমৃদ্ধ ডায়েরি পাওয়া গিয়েছে বলেও ব্যাঙ্কশাল আদালতে জানান ইডির আইনজীবী। আদালতে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘শুধু প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নয়, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে। পুরো সিস্টেম দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। প্রথমে মনে হচ্ছিল এই এই দুর্নীতি ভারত মহাসাগরের মতো বড়। কিন্তু তাতে ডুব দিয়ে দেখছি দুর্নীতি প্রশান্ত মহাসাগরের মতো বড়। তাতে এখন আরও নাটকীয় মোড় এসেছে।’’ কুন্তলকে ১৪ দিনের ইডি হেফাজতে পাঠানোর আবেদনও তিনি জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, কুন্তলের আইনজীবী সেলিম রহমানের বক্তব্য, ‘‘ইডির আইনজীবী প্রশান্ত মহাসাগরের মতো দুর্নীতির কথা বললেও দুর্নীতির ব্যাপ্তি পুকুরের মতোও নয়।’’ কুন্তলের কাছ থেকে কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি বলেও তিনি আদালতে জানান। কুন্তলকে ইডি হেফাজতে নেওয়ার আর্জির বিরোধিতা করে সেলিম আদালতে জানান, যে কোনও কঠিন শর্ত দেওয়া হলেও যেন তাঁকে ইডি হেফাজতে পাঠানো না হয়। প্রয়োজনে কুন্তল নিজের ফোন খোলা রাখবেন এবং বাড়িতে থাকবেন বলেও আদালতে জানিয়েছেন সেলিম।
প্রসঙ্গত, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযানের পর শনিবার সকালে হুগলির তৃণমূল যুবনেতা কুন্তলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে হাসপাতালে এবং পরে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ধৃত যুবনেতাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলেন ইডি আধিকারিকরা।
নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ তাপস মণ্ডল টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন কুন্তলের বিরুদ্ধে। তাপসের দাবি ছিল, ৩২৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন কুন্তল। এ ছাড়াও তাপসের পরিচিতেরা তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নিয়েছেন কুন্তল। সেই সংক্রান্ত নথিও তাঁর কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তাপস। কুন্তলকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল সিবিআই। এর পর শুক্রবার সকাল থেকে তদন্তে নামে ইডি। দু’টি দলে ভাগ হয়ে দু’টি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা। শুক্রবার সেখানে দিনভর তল্লাশির পর শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় কুন্তলকে।