মমতার সঙ্গে তাঁর ছবিকে সামনে রেখেই ভোটের প্রস্তুতি সারছেন নির্দল প্রার্থী সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতীক জোড়াপাতা। নিজস্ব চিত্র
পুরভোট দক্ষিণ কলকাতায় বহাল রইল তৃণমূলের জোড়া কাঁটা। শনিবার দুপুর তিনটে পর্যন্ত ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়। নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তৃণমূলের দুই ক্ষুব্ধ প্রার্থী সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তনিমা চট্টোপাধ্যায়। মনোনয়নপর্ব প্রত্যাহারের পরেই তাঁদের প্রতীক দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কাকতালীয় ভাবে পুরভোটে দু’জনেরই প্রতীক জোড়া পাতা। পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা ঘোষণার সময় বালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোষণা হয়েছিল প্রয়াত নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমার নাম। কিন্তু পরে তাঁর থেকে প্রতীক প্রত্যাহার করে নেয় দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বদলে ওই ওয়ার্ডে ফের প্রার্থী করা হয় বিদায়ী কো-অর্ডিনেটর সুদর্শনা ভট্টাচার্যকে। দলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তনিমা।
আর দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি সচ্চিদানন্দ ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতীক পাওয়ার পর প্রচার শুরু করবেন তিনি। তনিমার চেয়ে সচ্চিদানন্দকে নিয়েই তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি বেশি। কারণ ৭২ নম্বর ওয়ার্ড মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের অন্তর্গত। সচ্চিদানন্দকে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস কুমার, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্ররা। কিন্তু তাঁর অনড় মনোভাবের কথা জানিয়ে দিয়েছে। তাই ভবানীপুর-সহ দক্ষিণ কলকাতায় জোড়াপাতাই এ বার জোড়া কাঁটা তৃণমূলের।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোনও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালেন জোড়াপাতা প্রতীকে।
এই পুরভোটকেই নিজের শেষ নির্বাচন বলছেন তৃণমূলের মনুয়াদা (সচ্চিদানন্দের ডাক নাম)। ২০১৬ সালের পর থেকে তাঁকে নাকি আর দলের কর্মসূচিতে ডাকা হত না বলেই অভিযোগ করেছেন সচ্চিদানন্দ। তিনি বলেন, ‘‘ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে মমতার সমর্থনে কয়েকটি হোডিং লাগিয়েছিলাম। তা খুলে ফেলতে বলা হল। একটি অটো নিয়ে এক দিন মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে প্রচার করেছিলাম। সেই অটোটিকে আটক করল ভবানীপুর থানা। ১০ দিন পর ছাড়িয়ে আনতে হল। যে চায়ের দোকানে চা খেতাম, পুজোর সময় সেই চায়ের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হল। এমন অনেক ঘটনাই আছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাকে আমার একদা সতীর্থরা অনুরোধ করেছিল না দাঁড়াতে। কিন্তু ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে মানুষের দাবি মেনেই আমি দাঁড়িয়েছি। আর এটাই তো আমার শেষ ভোটযুদ্ধ। তাই পিছিয়ে আসার প্রশ্ন নেই।’’ সচ্চিদানন্দবাবুর ছোট জামাই ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে কো-অর্ডিনেটর অরূপ চক্রবর্তী। তিনি এ বার প্রার্থী হয়েছেন ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁকেও পাঠানো হয়েছিল শ্বশুরমশাইকে ভোটযুদ্ধ থেকে বিরত করতে। কিন্তু জামাইকেও নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন অভিমানী সচ্চিদানন্দ।
আর নির্দল প্রার্থী হয়ে তনিমা বলছেন, ‘‘প্রয়াত দাদার ইচ্ছেতেই আমার প্রার্থী হওয়া। দলের সঙ্গে কোনও মতভেদ নেই। আমরা লড়াই প্রার্থীর বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে নয়।’’ রবিবার থেকেই জোড়া পাতা হাতে প্রচারে নামবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।