দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোনের বাক্স। ইনসেটে, দেওয়াল ভেঙে এ ভাবেই দোকানে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার নন্দকুমারে। নিজস্ব চিত্র
তমলুক শহরে হাসপাতাল মোড়ে কয়েক দিন আগে তিনটি দোকানের দরজা কেটে চুরির ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। ৫ জানুয়ারি ওই ঘটনায় একটি মোবাইল দোকানের সিসি ক্যামেরার ছবির সূত্র ধরে ৪ জনের দুষ্কৃতীদলকে গ্রেফতারও করেছে তমলুক থানার পুলিশ। কিন্তু তাতেও যে দুষ্কৃতীদের দমানো যায়নি তার প্রমাণ মিলল বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায়। নন্দকুমার থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মোবাইলের দোকানের দেওয়াল ভেঙে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার দামি মোবাইল লুট করেছে দুষ্কৃতীরা। শুধু তাই নয়, শহরে রাজবাড়ি চত্বরে প্রাক্তন এক অধ্যাপকের ফাঁকা বাড়িতেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির লোকজন বাড়ি ফিরে চুরির ঘটনা জানতে পারেন।
মোবাইল দোকানের মালিকের দাবি, দোকানের পিছনের দিকে পাকা দেওয়ালের একাংশ কেটে ভিতরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। প্রায় ২২০ টি মোবাইল নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। যার মূল্য প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা। তমলুক থানার কয়েকশো মিটার দূরে রাজবাড়ি এলাকায় ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনায় পরিবারের দাবি, দুষ্কৃতীরা তালা ভেঙে কয়েক ভরি সোনার গয়না চুরি করেছে। শুক্রবার দুপুরে বাড়ি ফিরলে চুরির ঘটনা নজরে আসে। শহরে উপুর্যপরি চুরির ঘটনায় আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কারণ, দু’টি ক্ষেত্রেই ঘটনা ঘটেছে থানার অদূরে। দু’টি চুরির ঘটনায় পুলিশ তদন্তে নেমেছে। তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘নন্দকুমার ও তমলুকে চুরির ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতী দলকে ধরতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
গত ১ নভেম্বর তমলুক শহরের পদুমবসানে শিক্ষক দম্পতির অনুপস্থিতে বাড়ির দরজা কেটে চুরি হয়েছিল। ফের একইভাবে চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, নন্দকুমার বাজারে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ও হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী এলাকা হাতিমোড় নামে পরিচিত। মোড় থেকে ১০০ মিটার দূরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে নন্দকুমার থানা। কয়েকশো মিটার দূরেই বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির অফিস। হাতিমোড়ে সড়কের ধারে গত ৬ বছর ধরে মোবাইলের দোকান চিন্ময়ানন্দ দাস অধিকারীর। পাশাপাশি বহু দোকানপাট থাকায় এলাকাও জমজমাট থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই দোকানের পিছনে পাকা দেওয়ালের একাংশ ভেঙে দুষ্কৃতারী ২২০টি মোবাইল চুরি করে বলে অভিযোগ দোকান মালিকের। চিন্ময়ানন্দ বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বাজারে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হিসাবে দোকান ছিল। তবে সকালে অল্পসময় দোকানে খুলে বন্ধ করে দিই। শুক্রবার সকালে দোকানে এসে দেখি শো-কেসে রাখা একাধিক মোবাইল ফোন উধাও। দোকানের পিছনের দেওয়াল ভাঙা। দোকানের পিছনে গিয়ে দেখি প্রচুর মোবাইলের খালি বাক্স পড়ে রয়েছে। প্রায় ২৮ লক্ষ টাকার মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে চুরির ছবি ধরা পড়েছে। সেই মতো তদন্তও শুরু হয়েছে। ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে নন্দকুমার বাজার উন্নয়ন সংস্থার সম্পাদক গৌরহরি সাউটিয়া বলেন, ‘‘থানার কাছে অথচ যে ভাবে দোকানে দেওয়াল ভেঙে চুরি হয়েছে তাতে আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমরা চাই দুষ্কৃতীদের ধরতে দ্রুত পদক্ষেপ করুক পুলিশ। সেই সঙ্গে বাজারের নিরাপত্তায় পুলিশের টহলদারি বাড়ানো হোক।’’
তমলুক রাজবাড়ি চত্বরে ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনায় গৃহকর্ত্রী গীতা দাস জানান, পরিবারের সকলে মিলে রামনগরে আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। এ দিন সকালে প্রতিবেশীরা বাড়ির দরজা ভাঙা দেখে তাঁদের খবর দেন।