হারের কারণ যাচাই করতে চান শুভেন্দু।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপি-র বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বার করতে বিধানসভা ধরে-ধরে ফলাফলের ময়নাতদন্ত চাইলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপি-র কার্যকারিণী বৈঠকে এই কথাই বলেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তবে ‘দাবি’ আকারে নয়, পরামর্শ দেওয়ার সুরেই হারের কারণ খোঁজা উচিত বলে নিজের বক্তব্যে জানিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে চান বলেও বৈঠকে জানান শুভেন্দু। বিজেপি সূত্রের খবর, শুভেন্দু জানিয়েছেন, যিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাঁকে নিজের এলাকায় সময় দিতে হবে। নিজের বুথে যেন দল জয় পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
২০০-র বেশি আসনে জেতার লক্ষ্য নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমেছিল বিজেপি। তারা জয় পেয়েছে ৭৭টি আসনে। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এগিয়ে থাকা অনেক বিধানসভা আসনেই ফল খারাপ হয়েছে। দল যেখানে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ১২১টি বিধানসভা আসনে ‘জয়’ পেয়েছিল, সেখানে বিধানসভা নির্বাচনে ফল খারাপ হল কেন, তা নিয়ে ২ মে ভোটের ফল ঘোষণার দিন থেকেই বিজেপি-র অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। মঙ্গলবারের কার্যকারিণী বৈঠকে হারের কারণ পর্যালোচনা করার বিষয়টি না থাকলেও নিজের বক্তব্যে সেই প্রসঙ্গ তোলেন শুভেন্দু।
ওই বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা। সেই বিষয়টিও জায়গা পায় শুভেন্দুর বক্তব্যে। বিজেপি সূত্রের খবর, শুভেন্দু জানান, খুব তাড়াতাড়ি বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে একটি একদিনের প্রশিক্ষণ শিবির করতে চান তিনি। নতুন বিধায়কদের বিধানসভার নিয়ম এবং কী ভাবে শাসকদলের মোকাবিলা করতে হবে, তা শেখানোর জন্য ওই প্রশিক্ষণ শিবির হবে হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরে। সেই শিবিরের উদ্বোধনে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে উপস্থিত থাকার অনুরোধও করেন শুভেন্দু। একই সঙ্গে বলেন, শিবিরে প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ছাড়াও কয়েকজন প্রাক্তন বিধায়ক থাকবেন। তাঁদের মধ্যে ২০১৬ সালে বিজেপি-র টিকিটে জয়ী বিধায়ক মনোজ টিগ্গা যেমন থাকবেন, তেমনই থাকবেন তৃণমূল থেকে আসা সব্যসাচী দত্ত, জটু লাহিড়িরা। ঘটনাচক্রে, যাঁরা দু’জনেই বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়েছেন।
বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে হাজির থাকলেও এই প্রথম বিজেপি-র সংবিধান অনুসারে কোনও সাংগঠনিক বৈঠকে হাজির থাকলেন শুভেন্দু। এই ধরনের বৈঠক সাধারণত নিয়মমাফিক হয়ে থাকে। বড় কিছুর আকর্ষণ ছিলও না। তবে আকর্ষণ ছিল শুভেন্দুর উপস্থিতি নিয়ে। প্রথমবারের সাংগঠনিক বৈঠকে তিনি কী বলেন, তার দিকে নজর ছিল রাজ্য থেকে জেলা নেতৃত্বের। বৈঠকে উপস্থিত এক বিজেপি নেতা বলেন, “শুভেন্দুদা নিজে যে একজন বড়মাপের নেতা, তা তিনি তাঁর কথার মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি অনেক পরিকল্পনার কথাও বলেছেন। একই সঙ্গে অল্প দিনের মধ্যে বিজেপি তাঁকে যে গুরুত্ব দিয়েছে, তার জন্য দলীয় নেতৃত্বের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেছেন।”