শুভেন্দু অধিকারী, জে পি নড্ডা এবং সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব ছবি।
শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় সভা করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। কিন্তু সেই সভায় থাকছেন না বিরোধী দলনেতা। রবিবার যখন রামনগরে নড্ডার সভা, তখন অন্তত ১৭০০ কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরায় থাকবেন শুভেন্দু। পড়শি রাজ্যে ভোটপ্রচারে গিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। অতএব, শুভেন্দুর জেলার সভায় নড্ডার একমাত্র সঙ্গী হতে চলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বঙ্গ-রাজনীতিতে।
রবিবার রামনগরের স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে সভা করার কথা নড্ডার। সেই উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় পৌঁছন তিনি। রাজারহাটের যে হোটেলে তিনি রাত্রিবাস করবেন, সেখানেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিজেপি সূত্রে খবর, সিউড়িতে সভা করে অনেক রাতে সেই বৈঠকে যোগ দেন শুভেন্দু। তত ক্ষণে সুকান্ত বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। নড্ডার সঙ্গে একান্তে কিছু ক্ষণ কথাও হয় বিরোধী দলনেতার। কিন্তু নড্ডার সভায় তিনি থাকছেন না। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বেলার দিকে ত্রিপুরার উদ্দেশে রওনা দেবেন শুভেন্দু। যাবেন ধনপুরে। সেখানে তাঁর জনসভা রয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রাথমিক ভাবে রাজ্যে ২৫টি আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই তালিকায় কাঁথিও রয়েছে। শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী যেখানকার বর্তমান সাংসদ। যিনি খাতায়কলমে তৃণমূলের। সেই আসন দখল করতে মরিয়া বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রামনগরের দলীয় সভায় না থেকে কেন ত্রিপুরায় ভোটপ্রচারে যাচ্ছেন শুভেন্দু, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। জল্পনা— তবে লোকসভার লড়াইয়ে পারিবারিক পরিচয় দূরে রাখতেই কি এই সিদ্ধান্ত?
বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘কাঁথির বর্তমান সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বাবা। তা মাথায় রেখেই হয়তো শুভেন্দুকে ত্রিপুরা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।’’ তা ছাড়াও কাঁথিতে দলের সাংগঠনিক শক্তি কোনও এক জন নেতার জনপ্রিয়তার উপর যে নির্ভর করছে না, শুভেন্দু না-থাকায় সেই বার্তাও শাসকদল তৃণমূলকে দেওয়া যাবে বলেই দাবি ওই নেতার। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে কাঁথিতে তৃণমূল পেয়েছিল ৫০.৩০ শতাংশ ভোট। আর বিজেপির ঝুলিতে আসে ৪২.৪০ শতাংশ। শিশির জিতেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৬৮ ভোটে। তার পর রাজনীতির জল বহু দূর গড়িয়েছে। গত বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। সেই সময়েই ভোট-প্রচারে আসা শাহের জনসভায় দেখা যায় শিশিরকে। গত বিধানসভা ভোটে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভাগুলিতে ভাল ফলও করেছিল বিজেপি। ৭টির মধ্যে ৪টিতে জয় পেয়েছিল তারা। বাকি ৩টিতে দ্বিতীয় স্থানে। সেই নিরিখে কাঁথি লোকসভা আসনে তারা খানিক এগিয়েই রয়েছে বলে মনে করে গেরুয়া শিবির।
দলের অন্য একটি অংশের দাবি, শুভেন্দুর পারিবারিক পরিচয় দূরে রাখার চেয়েও বড় কারণ হল— বাংলার পাশাপাশি ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনকেও বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে দল। সেখানেও তৃণমূল প্রতিপক্ষ হওয়ায় শুভেন্দুর থাকা অত্যন্ত জরুরি। তা নজরে রেখেই তাঁকে ত্রিপুরায় পাঠানো হচ্ছে।