মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়া করলেন শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডি লিট প্রদান করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ডি লিট তুলে দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ওই অনুষ্ঠানে অটলবিহারী বাজপেয়ী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, উইনস্টন চার্চিল, এপিজে আব্দুল কালামের মতো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মমতাকে এক বন্ধনীতে রেখে প্রশংসা করেন আনন্দ। রাজ্যপালের এ হেন মমতা-স্তুতি নিয়েই তাঁকে নিশানা করলেন বিরোধী দলনেতা। টুইটারে লিখেছেন, ‘‘রাজ্যপালের ভাষণ শুনে মনে হচ্ছিল, যেন উনি রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে যে ঔপচারিক বক্তৃতা দেবেন, তারই মহড়া দিলেন।’’
রাজ্যপাল পদে সিভি আনন্দ বোস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে তাঁর ‘মধুর’ সম্পর্ক একেবারেই ভাল চোখে দেখছেন না রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। আনন্দের ভূমিকায় মোটেই খুশি নন শুভেন্দু-সহ রাজ্যের বিজেপি নেতারা। বিজেপির অনেক নেতাই প্রকাশ্যে এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাজ্যপাল পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে ভাবে ‘তালে তাল মিলিয়ে চলছেন’ আনন্দ, তাতে চটেছে পদ্ম শিবির। এই নিয়ে দিল্লির নেতৃত্বের কাছে তাঁরা নিজেদের অসন্তোষের কথাও জানিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল। রাজ্যপালকে ‘রাজ্য সরকারের ফোটোকপি মেশিন’ বলে অভিহিত করেছেন বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত। রাজ্যপাল ‘প্রত্যাশিত’ ভূমিকা না নিলে সংবিধান মেনে তাঁর সম্পর্কেও উপযুক্ত জায়গায় অভিযোগ জানাবেন বলে মন্তব্য করেছিলেন শুভেন্দু।
নতুন রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য বিজেপির নেতাদের ‘বনিবনা’ না হলেও, রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে আনন্দের সম্পর্ক বেশ ‘ভাল’। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আনন্দের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ বজায় রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সৌজন্যেও কোনও খামতি রাখেননি। নতুন রাজ্যপালের শপথগ্রহণের দিন কলকাতার একটি বিখ্যাত দোকানের ১০০টি রসগোল্লা দু’টি নীল হাঁড়িতে করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আনন্দকে। ‘রাজ্যপাল খুব ভাল এবং ভদ্র’ বলে মন্তব্যও করেছিলেন মমতা। এর পর গত ২৬ জানুয়ারি রাজভবনে ‘হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠানেও এক সঙ্গে দেখা গিয়েছিল রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি শুভেন্দু। ‘বয়কট’ করেন অনুষ্ঠান। এই আবহে সোমবার সেন্ট জেভিয়ার্সের অনুষ্ঠানে মমতার প্রশংসা করে আনন্দ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এই ডি লিট সম্মান অর্জন করেছেন।” রাজ্যপাল এ-ও জানান, যে সকল রাজনীতিবিদ রাজনীতির সঙ্গে সাহিত্যে অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন, তাঁর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি অটলবিহারী বাজপেয়ী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, উইনস্টন চার্চিল, এপিজে আব্দুল কালাম-সহ অন্য রাজনীতিবিদের নাম উল্লেখ করেন। এই মন্তব্য নিয়েই এ বার রাজ্যপালকে বিঁধলেন বিরোধী দলনেতা। যা এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রাজ্যপালের ওই মন্তব্যের ভিডিয়ো পোস্ট করে অন্য একটি টুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন শুভেন্দু। লিখেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে রাজ্যপালের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আংশিক ভাবে সমর্থন করছি যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উইনস্টন চার্চিলের মতোই, যিনি ১৯৪২ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী ছিলেন। ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যা। অনাহার এবং অপুষ্টির কারণে ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।’’