চন্দ্রকোনার সভায় শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা— নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার সভায় ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানকারী প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে এমপি এবং মন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা। রাজীব গান্ধী তাঁকে ‘তৈরি করেছিলেন’। ‘আশ্রয় দিয়েছিলেন’ অটলবিহারী বাজপেয়ী। এরপর শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘ওই দলের (তৃণমূল) থেকে বিশ্বাসযোগ্যতার সার্টিফিকেট শুভেন্দু অধিকারীকে নিতে হবে, কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’’
শনিবার দুপুরে চন্দ্রকোনা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত খেজুরডাঙ্গা মাঠে জনসভা ও যোগদান মেলায় শুভেন্দুর সঙ্গে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের প্রাক্তন সুপার তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ এবং বিজেপি-র ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার পর্যবেক্ষক নীলাঞ্জন অধিকারী।
শুভেন্দুর উপস্থিতিতে বিজেপি-তে যোগদান করেন তৃণমূল থেকে আসা একাধিক নেতা-নেত্রী। জনসভা থেকে শুভেন্দু একাধিক বিষয়ে আক্রমণ করেন তৃণমূলকে। পাশাপাশি, স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করেন। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পকে নিশানা করে বলেন, ‘‘এত দিন বলতেন সব কাজ হয়ে গিয়েছে। তা হলে ভোটের মুখে স্বাস্থ্যসাথী নামের ঢপের চপ কেন? কেউ তা থেকে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব হাসপাতাল, নার্সিংহোম-গুলিকে ডেকে চুপিসাড়ে বলছেন তিনটা মাস ‘দেখে’ দেওয়ার।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ানও তুলে ধরেন শুভেন্দু। অভিষেককে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে সভা করে তোলাবাজ। সেই সভায় ৪ হাজার পুলিশ আর ২ হাজার লোক থাকে আর কারা ওই ২ হাজার লোক তা সকলেরই জানা।’’
গত ১৯ ডিসেম্বর তিনি বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই গোপন ডিল (রফা)-র অভিযোগ সরব হয়েছে তৃণমূল। সে প্রসঙ্গে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘হ্যাঁ, বিজেপি-র সঙ্গে আমার ডিল হয়েছে। রাজ্যে বেকারত্ব ঘোচানোর ডিল হয়েছে। রাজ্যে শিল্প ফিরিয়ে আনার ডিল হয়েছে।’’
বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরবে এবং পঞ্চায়েত ভোটে সকলে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে দাবি জানান শুভেন্দু। তাঁর আবেদন, ‘‘পুরনো বামপন্থী কর্মীদের বলি, ঝান্ডা ধরুন আর যা-ই করুন পদ্মকে দিতে হবে। না হলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও প্রার্থী দিতে দেবে না আপনাদের।’’
নন্দীগ্রামের সদ্য-প্রাক্তন বিধায়ক শনিবার দাবি করেন, ‘‘সাড়ে ৯ বছরে এ রাজ্য এগিয়ে যাওয়ার থেকে পিছিয়েছে অনেক। বেড়েছে বেকারত্ব। শিল্পের কোনও নামগন্ধই নেই। ওই দলের ভিতরে ছিলাম। এটা রাজনৈতিক দল নয় কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। আমি বলে এসেছি দিদিমণিকে, এটা কোম্পানি, তাই কোম্পানির কর্মচারী হয়ে থাকতে পারব না।’’
ঘাটালের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাগুলির অবস্থা খারাপ হওয়ার পেছনে বালি পাচার চক্রের ট্রাকের যাতায়াতকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘‘মণ্ডল মার্কা, ত্রিশূল মার্কা কার্ড পুলিশকে দেখালেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ওভারলোডেড বালির গাড়ি। আর সেই কার্ড ছাপানো হচ্ছে হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটে। ওই কার্ড পাওয়া যায়, বিনয় মিশ্রের হাত ধরে গোটা রাজ্যে যুবা তৃণমূলের কাছ থেকে। বালি পাচার, কয়লা পাচার, গরু পাচার পাথর পাচার, আমফানের টাকা চোর, চাল চোর, এ বার কিডনি চুরি করবে। এখন থেকে তাই সকলকে সাবধানে থাকতে হবে।’’