সোমবার বিধানসভা অধিবেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ পর্বে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত। ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়ে আলুচাষিদের আত্মহত্যা বাড়ছে বলে বিধানসভায় অভিযোগ করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা সরকারের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিই কৃষকদের আত্মহত্যার জন্য দায়ী। সোমবার এই বিষয় নিয়ে শাসক এবং বিরোধীদের বিতণ্ডার জেরে মুলতবি হয়ে গেল বিধানসভা অধিবেশন। সোমবার বিধানসভার কৃষকদের অধিকারের দাবিতে বিধানসভার ভিতরে এবং পরে বিধানসভার বাইরেও বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন বিজেপির বিধায়কেরা। সেই বিক্ষোভে শুভেন্দু-সহ বিজেপির সমস্ত বিধায়কই হাজির হন হাতে আলু এবং গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে। শাসককে ধিক্কার জানিয়ে বিজেপি বিধায়করা বলেন, ‘‘এই সরকার শুধু চোর ডাকাতদের হাত মজবুত করতে জানে, কৃষকদের স্বার্থের কথা বললেই মুখে কুলুপ দেয়।’’
সোমবার বিধানসভা অধিবেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ পর্বে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু হঠাৎই সেখানে প্রশ্ন তোলেন, রাজ্য জুড়ে আলুচাষিদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁরা আত্মহত্যা করছেন, এ ব্যাপারে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? শুভেন্দুর প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ প্রশ্নের জবাব আগেই দেওয়া হয়েছে, তবু আবার বলছি, সার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির জন্যই সারের দাম বাড়ছে। ফলে আলুচাষিদের উপর চাপ বাড়ছে। তার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে।’’ কৃষিমন্ত্রী এ কথাও বলেন যে, এই ধরনের ঘটনা দেশে ইদানীং বাড়লেও অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় আমাদের রাজ্যে অনেক কম। এই নিয়ে দু’পক্ষের বাগ বিতণ্ডার পরই মুলতবি হয়ে যায় বিধানসভা। তবে শুভেন্দুরা বিধানসভার বাইরে বেরিয়েও একই বিষয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিধানসভার বাইরে এসে শুভেন্দুর নেতৃত্বে হাতে আলু নিয়ে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বিজেপি বিধায়করা বলতে থাকেন, ‘‘আলুচাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না বলেই তাঁরা আত্মহত্যা করছেন। অথচ রাজ্য সরকারের মুখে এরপরও কুলুপ।’’ আলুচাষিদের পাশাপাশি শুভেন্দুদের বিক্ষোভে উঠে আসে উত্তরবঙ্গের চা-বাগান এবং জঙ্গল কেটে আবাসন নির্মাণের প্রসঙ্গও।
বিধানসভার বাইরে এক দফা বিক্ষোভ দেখানোর পর বিধানসভার গেটের ভিতরে ঢুকে আম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশেও বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দুরা। সেখানে অবশ্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন মূলত বিজেপির উত্তরবঙ্গের বিধায়কেরাই। উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলিকে ধ্বংস করে আবাসন নির্মাণ প্রকল্প তৈরির অভিযোগের পাশাপাশি জঙ্গল কেটে নির্মাণের কাজ করার অনুমতি দেওয়ার অভিযোগও তোলেন শুভেন্দুরা। তাঁরা বলেন, ‘‘জঙ্গল কেটে উষ্ণায়ন বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যাঁরা জঙ্গল কাটছেন, তাঁরা সরকারের তহবিল ভরছেন বলে তাঁদের কিছু বলা হচ্ছে না। এই সরকার আসলে চোর-ডাকাতদের হাত মজবুত করছে। এর বিহিত চেয়েই ধর্না। তবে শুভেন্দুরা একই সঙ্গে জানিয়েছেন, আপাতত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা ভেবে বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখালেও বাইরে প্রকাশ্যে কিছু করবেন না। পরীক্ষা শেষ হলেই আলুচাষি, চা বাগান এবং বন রক্ষার স্বার্থে বড় সড় আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।