পলিথিনে মোড়া বিদ্যাসাগরের মূর্তি। অরণ্যশহরে। নিজস্ব চিত্র
প্রায় ৯ মাস পরে বিদ্যাসাগর মূর্তির বন্ধন-মুক্তির তোড়জোড় শুরু হল ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের অন্দরে।
বিধানসভা ভোটের আগে ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীর উপরে বর্তাচ্ছে, এমন খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তারপরে বিদ্যাসাগর মূর্তির বন্ধন-মুক্তির তোড়জোড়ে জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। গত ১৭ ডিসেম্বর ওই মূর্তির আবরণ উন্মোচনের কথা ছিল শুভেন্দুর। কিন্তু মন্ত্রী ওই দিন ঝাড়গ্রামে আসতে পারেননি। তারপরে মূর্তির আবরণও আর উন্মোচিত হয়নি। জেলা তৃণমূলের একাংশের ধারণা, এ বার শুভেন্দু আসবেন। জেলা প্রশাসনে সূত্রের অবশ্য দাবি, কয়েকদিন আগেই ওই মূর্তির বন্ধন মুক্তির জন্য রাজ্য প্রশাসন থেকে জেলাকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল।
বিদ্যাসাগরের দু’শোতম জন্মজয়ন্তীতে গত ২৬ অক্টোবর শহরের প্রধান রাস্তায় ওল্ড সেটেলমেন্ট মোড়ে মূর্তিটি বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেই থেকে মুখবাঁধা রয়েছে মূর্তি। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে মাসের পর মাস মুখ ঢাকা অবস্থায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি পড়ে থাকায় সরব হন বিশিষ্টজনেরা। বিদ্যাসাগরকে অবমাননার অভিযোগ তোলেন অনেকে। কয়েক মাস আগে বিদ্যাসাগর স্মরণ সমিতির ঝাড়গ্রাম শাখার তরফে প্রশাসনে লিখিতভাবে মূর্তির বন্ধন-মুক্তির আবেদন করা হয়।
গত ৮ জুলাই ওল্ড সেটেলমেন্ট মোড়ে বিদ্যাসাগরের ওই আবক্ষ মূর্তির মাথার উপরে স্টিলের আচ্ছাদন-সহ এলইডি স্পটলাইট লাগানো হয়। এতদিন মূর্তিটি সাদা অস্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণে বাঁধা ছিল। দিন কয়েক আগে আবরণ খুলে ফাইবার গ্লাসের মূর্তিটি নতুন করে সাদা রং করে স্বচ্ছ লাল পলিথিনে ঢেকে রাখা হয়েছে।
লোকসভা ভোটের পরে শুভেন্দুকে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুও বিভিন্ন দলীয় ও প্রশাসনিক কর্মসূচিতে জেলায় আসা-যাওয়া শুরু করেন। কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেলার সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেন মমতা। তারপর থেকেই শুভেন্দু ক্রমশ ঝাড়গ্রাম জেলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, ‘‘মাসের পর মাস বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তিটি প্রকাশ্য রাস্তা মোড়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় থাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তাই যত শীঘ্র সম্ভব মূর্তিটির আবরণ উন্মোচনের জন্য দলের তরফেও বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, মূর্তিটি এভাবে প্রায় ৯ মাস মুখবাঁধা অবস্থায় থাকায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দ্রুত মূর্তিটির আবরণ উন্মোচনের জন্য জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলেন তিনি। তারপরে শুভেন্দুকে দিয়ে মূর্তির আবরণ উন্মোচন করানোর ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসনের তরফে জেলা প্রশাসনকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি মেনে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মূর্তিটি উদ্বোধনের জন্য পরিবহণমন্ত্রীর কাছে সময়
চাওয়া হয়েছিল। উনি এখনও সময় দেননি। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় চাওয়া হবে।’’
হঠাৎ করে মূর্তি নতুন করে রং করে স্পটলাইট লাগানো প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুরসভার প্রশাসক সুবর্ণ রায় বলেন, ‘‘মূর্তির মাথায় আচ্ছাদন ও আলো বসানোর কাজ লকডাউনের জন্য আটকে গিয়েছিল। তাই বকেয়া কাজ শেষ করে ফেলা হচ্ছে।’’
শহরবাসীর অনেকেই চাইছেন, বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টার বন্ধনমুক্তির পাশাপাশি, ওল্ড সেটেলমেন্ট মোড়ের নতুন নাম হোক বিদ্যাসাগর মোড়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, মূর্তির উদ্বোধনের পরে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।