রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, হলদিয়ার সভা থেকে শুভেন্দু কোনও ঘোষণা করতে পারেন। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার তাঁর জন্মদিনে কি ‘নতুন কিছু’ ঘোষণা করবেন শুভেন্দু অধিকারী? জল্পনা এবং আগ্রহে ফুটছে গোটা বাংলা। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর শুভেন্দু নতুন করে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে কিছু ঘোষণা করেননি। কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র তাঁকে নিয়ে পোস্টার, ব্যানারের ছড়াছড়ি। এমনকি, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারে যে সভা করবেন, তার আশেপাশেও শুভেন্দুর পোস্টার পড়েছে। সবক’টিতেই ‘দাদার অনুগামী’ লেখা।
অন্যদিকে, মঙ্গলবারই শুভেন্দুর হলদিয়ায় যে ‘অরাজনৈতিক সভা’য় যোগ দেওয়ার কথা, তার আশেপাশে আবার তৃণমূলের পোস্টার পড়েছে বলে খবর। সেখানে মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও আছে। রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, হলদিয়ার সভা থেকে শুভেন্দু কোনও ঘোষণা করতে পারেন। যদিও শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহল এমন কোনও সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, শুভেন্দুর নীতিগত অবস্থান বজায় রেখে নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার আগে বিধায়ক পদ ছাড়বেন। সে তিনি নিজের দল গড়ুন বা বিজেপি-তে যান। ঘটনাচক্রে, শুভেন্দু যদি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন, তা হলে তাঁকে সশরীরে স্পিকারের কাছে গিয়ে সেই ইস্তফাপত্রটি জমা দিতে হবে। সেটাই নিয়ম। যে কোনও আইনসভা সদস্য যদি পদত্যাগ করতে চান, তা হলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট আইনসভার স্পিকার (বিধানসভা এবং লোকসভা) অথবা চেয়ারম্যানের (রাজ্যসভার ক্ষেত্রে) কাছে হাজির হয়ে ইস্তফাপত্র দিতে হয়। এটা নিশ্চিত করতে যে, ওই সদস্যকে দিয়ে জোর করে কেউ ইস্তফাপত্র লিখিয়ে নেয়নি বা তাঁর ইমেল হ্যাক করে কেউ ওই ইস্তফা পাঠায়নি।
শুভেন্দু এখনও রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সময় চেয়েছেন বলে কোনও খবর নেই। সেক্ষেত্রে তিনি জনসভা থেকে বিধায়ক পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করে পরে সশরীরে গিয়ে ইস্তফা দেন কি না, সেটাও দেখার।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর জন্য বরাদ্দ হল কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এবং বুলেটপ্রুফ গাড়ি
আরও পড়ুন: মতুয়া-পাড়ায় যাওয়া স্থগিত অমিত শাহের
শুভেন্দু কোনও ঘোষণা করেন কি না, তার দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলও। দলের এক শীর্ষনেতার তির্যক মন্তব্য, ‘‘শোনা যাচ্ছে জন্মদিনে ত্যাগ এবং তার কয়েকদিন পর গ্রহণ।’’ অর্থাৎ, জন্মদিনে বিধায়ক পদ এবং দলত্যাগ এবং তার পর অন্য দলের পদগ্রহণ। প্রসঙ্গত, সোমবারই শুভেন্দুর জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। মন্ত্রক সূত্রের খবর, বুলেটপ্রুফ গাড়ি-সহ শুভেন্দুকে অন্তত ‘ওয়াই প্লাস’ ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই মর্মে নির্দেশও চলেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রাজ্য শাখার কাছে। ওই পর্যায়ের নিরাপত্তায় শুভেন্দুর সঙ্গে সর্বক্ষণ তিনজন সশস্ত্র রক্ষী থাকবেন। তাঁদের দু’জনের কাছে থাকবে লাইট মেশিনগান এবং একজনের কাছে ‘স্মল আর্মস’ (সাধারণত নাইন এমএম পিস্তল)। এ ছাড়াও তাঁর বাসস্থানের নিরাপত্তার জন্য আরও দু’জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকবেন।
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেলে শুভেন্দু রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা ছেড়ে দেবেন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার থেকেই শুভেন্দুর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বহাল হবে। এখন দেখার, শুভেন্দু নিজে রাজ্যের নিরাপত্তা ছাড়েন কি না এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নেন কি না। তা হলে তাঁর ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ সম্পর্কে বার্তা স্পষ্টতর হবে বলেই রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য।