শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
যে দিন শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হল, সে দিনই পথে বিরোধীদের সন্দেশখালি অভিযান নিয়ে ফের এক প্রস্ত উত্তেজনা ছড়াল। আদালতের অনুমতি নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বৃহস্পতিবার যখন সন্দেশখালি যাচ্ছিলেন, তখন রামপুরে তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে কাগজপত্র দেখিয়ে, সই করে তিনি জেলিয়াখালিতে পৌঁছন। শুভেন্দু জানান, ১০ মার্চ তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের দিনই সন্দেশখালিতে তাঁরা সভা করবেন। ওই দিন রাজ্যের আরও ৯ জায়গার পাশাপাশি সন্দেশখালিতেও মিছিল ও সভা করার কর্মসূচি আগেই নিয়েছে সিপিএম। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে নিয়ে বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদলকেও এ দিন ন্যাজাটে বাধা দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ ১৪৪ ধারার কথা বলে তাঁদের আটকাতে চাইলেও ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে সভা করেছেন বাম নেতারা।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু, বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষদের পুলিশ এ দিন রামপুরে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। পরে হাই কোর্টের অনুমতির কাগজপত্র দেখানো হলে জেলিয়াখালি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। শুভেন্দু অভিযোগ করেন, “প্রতিদিন মমতা-পুলিশ অসভ্যের মতো ব্যবহার করছে। আপনার এত ভয় কেন? কী লুকোতে চাইছেন?” রামপুর ঘাট থেকে নৌকায় চড়ে জেলিয়াখালিতে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন শুভেন্দু। শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে শুভেন্দুকে স্বাগত জানান এলাকাবাসীর একাংশ। বিরোধী দলনেতা জানান, আগামী ১০ তারিখ, তৃণমূলের ব্রিগেডের দিনেই তাঁরা সন্দেশখালির রাজবাড়িতে সভা করবেন। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের ডাক, মা-বোনেদের সম্মান জানাতে ‘সন্দেশখালি চলো’। শুধু সন্দেশখালি ও মিনাখাঁ, এই দু’টি বিধানসভা থেকে ২০ হাজার মানুষের জমায়েত করা হবে।”
রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য পাল্টা বলেছেন, “ব্রিগেডকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলার জন্য ডাক দিলে দেখবেন, সন্দেশখালি ফাঁকা। দেখবেন, মুখ্যমন্ত্রী কী বলছেন, তা শুনতে চলে এসেছেন সবাই।”
ন্যাজাটে বামেদের প্রতিবাদ সভায় সিপিএমের মহম্মদ সেলিম।
জেলিয়াখালি থেকে ফেরার পথে শেখ শাহজাহানের ‘খাস তালুক’ বলে পরিচিত সরবেড়িয়ার একটি মিষ্টির দোকানে ঢোকেন শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে, দোকানটি যে বাজারে, সেটিও শাহজাহানের নামে। ওই দোকান থেকে মিষ্টি কিনে উপস্থিত লোকজনকে মিষ্টি খাওয়ান বিরোধী দলনেতা
সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক ও খেতমজুর সংগঠনের নেতা নিরাপদকে নিয়ে ন্যাজাটে পৌঁছন বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরা। তবে অভিযোগ, ন্যাজাটে ঢোকার আগেই সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, পলাশ দাস, মৃণাল চক্রবর্তী, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নিরাপদদের আটকায় পুলিশ। তবে ব্যারিকেড ভেঙে বাম নেতা-কর্মীরা সেখানে পৌঁছন। কিন্তু অভিযোগ, ১৪৪ ধারা জারি করে সভার অনুমতি বাতিল করা হয়। সভা-মঞ্চও ‘জোর করে’ খোলানো হয়। পরে হ্যান্ড-মাইকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম অভিযোগ করেন, “আমরা বলেছিলাম, নিরাপদ সর্দারকে নিয়ে এখানে আসব। সন্দেশখালিতে চার দিকে পুলিশ মোতায়েন ছিল।... ওঁরা নিরাপদকে ভয় পেয়েছে।” সেই সঙ্গে বিধায়ক থাকাকালীন নিরাপদ যে সন্দেশখালির অত্যাচারের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তা-ও ফের মনে করিয়ে দেন সেলিম। তাঁর কথায়, “নিরাপদ যখন সন্দেশখালির মা-বোনেদের নির্যাতনের কথা বলেছিলেন, তখনকার ডেপুটি স্পিকার তথা বর্তমানে বিজেপি নেত্রী সোনালী গুহ মাইক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আজ পুলিশকে দিয়ে আমাদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” নিরাপদের অভিযোগ, “এখানে পঞ্চায়েতে কেউ প্রার্থী দিতে পারে না। প্রার্থী দিলে ঘরে থাকতে পারবে না। মানুষ এই অত্যাচার আর কত দিন সহ্য করবে? বাড়িতে মেয়ে থাকলে নির্যাতনের শিকার হবে। সন্দেশখালির মানুষ সব দেখেছেন। হিসাবের খাতা লম্বা হয়েছে। মা-বোনেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।”