কলকাতায় বিজেপির মিছিলে উত্তেজনা। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ কলকাতায় সোমবার সন্ধ্যায় বিজেপি-র সভার সুর কী হবে তা দুপুরে নন্দীগ্রামেই ঠিক করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন ঘোষণা করার পরে বোঝাই গিয়েছিল রাসবিহারীর মঞ্চ থেকে শুধু তারই জবাব দেবেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা। কিন্তু বিজেপি-র টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে রাসবিহারী মিছিল ঘিরে গোলমাল অন্য ইস্যুও তৈরি করে দেয়। তিনটি জায়গায় সঙ্ঘাত হয় তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। আর তাতেই দিলীপ, শুভেন্দুর কথাতেও সেই প্রসঙ্গ উঠে আসে। শুভেন্দু যখন জবাব দেওয়া কর্মীদের প্রশংসা করলেন তখন দিলীপ বললেন ‘হাত-পা’ চালানোর কথা। তৃণমূলকে শোনালেন ‘ভূগোল’ পাল্টে দেওয়ার হুমকি।
সোমবার দক্ষিণ কলকাতার মুদিয়ালি এলাকায় বিজেপি-র মিছিল লক্ষ্য করে ইট পড়ার পরে বিজেপি কর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়। বেশ কিছু বাইক ভাঙচুর করে। সেই সঙ্গে মিছিল থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তা ছেড়ে গলিতে ঢুকে তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করেন একদল বিজেপি কর্মী। পরে মঞ্চ থেকে তৃণমূল কর্মীদের দিকে তেড়ে যাওয়া দলীয় কর্মীদের শাবাশি জানালেন শুভেন্দু। শুধু তাই নয়, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা মনে করিয়ে আনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম। শুভেন্দু বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, ‘‘মিনি পাকিস্তান বলা মন্ত্রীর ছোট ছোট ভাইরা কয়েকটা পাথর ছুড়েছিল। আপনারা দেখিয়ে দিয়েছেন। মোদীজির মতো অন্দর ঘুষকে মারা।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘কী ভাবে অন্যায় হচ্ছে দেখুন। অনুমতি দেওয়া মিছিলে একের পর এক জায়গায় পাথর ছুড়েছে।’’
সোমবার দিলীপের বক্তব্যেও আগাগোড়া ছিল আক্রমণাত্মক মেজাজ। বিজেপি কর্মীদের উপরে আক্রমণ করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘এখানে যে হাজার হাজার যুবক উপস্থিত হয়েছেন তাঁদেরও ভগবান দু’টো করে হাত দিয়েছেন। আর তৃণমূলের গুন্ডাদের কি চারটে হাত আছে? তাই আমরা যদি একটু নড়াচড়া করি, তা হলে হাসপাতালে কি জায়গা পাওয়া যাবে? তাই পরিষ্কার করে বলতে চাই,আপনারা যদি অভ্যাস না পাল্টান আমরা তা হলে আপনাদের ভৌগলিক চেহারা পাল্টে দেব।’’ শুধু কর্মীদের কথাই নয়, তিনিও দরকারে হাত-পা চালাতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন দিলীপ। তিনি বলেন ‘‘দিলীপ ঘোষ খুব দুর্মুখ। এর মুখ চলে। তবে শুধু মুখ নয়, হাত-পা-ও চলে, দেখতে চাইলে দেখিয়ে দেব।’’
মমতার নন্দীগ্রামের সভাকেও কটাক্ষ করেন দিলীপ। বলেন, ‘‘দিদিমণি যখন খুঁজে বেড়াচ্ছেন নন্দীগ্রামটা জেতা যায় কি না, তখন আমরা ভবানীপুরটা জিতে নেব। সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমরা আজ একটা ডেমো দিলাম। এ পহেলি ঝাঁকি হ্যায়, পুরা ফিল্ম বাকি হ্যায়।’’ সোমবার নিজেকে ‘বালুমাটি’-র ছেলে আর দিলীপকে ‘লালমাটি’-র ছেলে বলে উল্লখে করে শুভেন্দু বলেন, তাঁরা অখণ্ড মেদিনীপুরের দুই প্রতিনিধি মিলে হারিয়ে দেবেন তৃণমূলকে। সেই সুরে দিলীপ বলেন তিনি ও শুভেন্দু ‘রাম-লক্ষ্মণ’। নন্দীগ্রামে মমতার সভা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দিদিমণি, গঙ্গার ওপারে গিয়ে লাভ নেই। ওপারে রাম-লক্ষ্মণের জুড়ি আছে, গঙ্গার ও পাশে ঘাসফুল ফুটবে না। ফেব্রুয়ারির পরে আপনার পার্টি অফিসে ঝান্ডা তুলতে লোক দেব না।’’