রাসবিহারীর সভায় শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র
নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘হাফ লাখ’ (অর্ধ লক্ষ অর্থাৎ, ৫০,০০০) ভোটের ব্যবধানে হারাতে না পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে সোমবার ঘোষণা করে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে রাসবিহারী পর্যন্ত মিছিলের শেষে রাসবিহারীতে এক সভায় শুভেন্দু সাফ বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মাননীয়াকে যদি হাফ লাখ ভোটে হারাতে না পারি, রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’
সোমবার দুপুরেই নিজে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন ঘোষণা করে চমক দিয়েছেন মমতা। শুভেন্দুর ডেরা বলে পরিচিত নন্দীগ্রামে গিয়েই তিনি সেই ঘোষণা করেন। এর পর বিকেলে তৃণমূলের ‘গড়’ তথা মমতার দীর্ঘ সময়ের লোকসভা কেন্দ্র দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মিছিল করেন শুভেন্দু। সেই মিছিলে খানিক বিশৃঙ্খলাও তৈরি হয়। বিজেপি অভিযোগ করে, তৃণমূলের লোকেরা মিছিলে ইট-পাটকেল ছুড়েছে। যার পাল্টা বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা লাঠি-হাতে তাদের তাড়া করেন। রাস্তার পাশে-রাখা মোটরবাইকও ভাঙচুর হয়। ওই মিছিলের পরেই রাসবিহারীতে সমাবেশ ছিল বিজেপি-র।
রাসবিহারী মোড়ের সেই সমাবেশ থেকেই মমতাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছোড়েন শুভেন্দু। পাশাপাশিই জানিয়ে দেন, পূর্বঘোষণা মতোই মঙ্গলবার তিনি নন্দীগ্রামের হেড়িয়ায় মমতার পাল্টা সভা করবেন। মমতার ঘোষণার পরে নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক কি বিজেপি-র টিকিটে সেখান থেকেই নির্বাচনে লড়বেন? এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব অবশ্য শুভেন্দুর বক্তব্যে মেলেনি। তবে তাঁর কথায় এই ইঙ্গিত মিলেছে যে, তিনি আশা করছেন, দল তাঁকে নন্দীগ্রামেই লড়ার টিকিট দেবে। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আমি একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ পার্টির সদস্য আর তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড কমিটি। দেড় জনের পার্টি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাননীয়া কোম্পানির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিলেও আমি তা পারি না। বিজেপি-তে তা করা যায় না। কিন্তু দল আমাকে প্রার্থী করুক বা অন্য কাউকে, পদ্ম প্রতীক নিয়ে যে-ই লড়ুক, মাননীয়াকে হারাবই হারাব!’’
বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে সোমবারই কলকাতায় প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি ছিল শুভেন্দুর। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। দক্ষিণ কলকাতায় ওই মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা আগেই করেছিল বিজেপি। কিন্তু তখন জানা ছিল না, সোমবার শুভেন্দুর পুরোন কেন্দ্র নন্দীগ্রামে গিয়ে সেখান থেকেই ভোটে লড়ার ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর ওই ঘোষণার পর এই মিছিল ও সমাবেশের গুরুত্ব বেড়ে যায়। এটা প্রত্যাশিতই ছিল যে, মমতার গড়ে এসে প্রাক্তন দলকে নতুন কোনও বার্তা দেবেন শুভেন্দু। কিন্তু বার্তার পাশাপাশিই শুভেন্দু তাঁর বক্তব্যে সটান চ্যালেঞ্জও ছুড়েছেন।
দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ে বিজেপি সোমবার সভা করার অনুমতি চেয়েও পায়নি বলে অভিযোগ তুলে সোমবার আরও একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন শুভেন্দু। জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি দিলীপ ও তিনি গড়িয়া মোড় থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিল করবেন। আর তার শেষে হবে সভা। দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘‘শুধু কালীঘাট থানায় একটা চিঠি ফেলে দিয়ে আসবেন। অনুমতির পরোয়া করি না। সভা হবে!’’
বক্তৃতা করতে উঠে শুভেন্দুর ওই মিছিল এবং সভার প্রস্তাবকে সমর্থন করেন দিলীপও। তিনিও জানান, শুভেন্দুর সঙ্গে তিনি গড়িয়া থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিল এবং সভায় অংশ নেবেন। বিজেপি-র অন্দরে শুভেন্দু-দিলীপের মধ্যে যে ‘চিড়’-এর কথা শোনা যাচ্ছিল, অন্তত সোমবার তা চোখে পড়েনি।
১৮ তারিখ মমতার নন্দীগ্রামের সভার পর ১৯ তারিখেই জবাবী সমাবেশ করবেন বলে আগেই ঘোষণা করেছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু তার আগের দিন রাসবিহারীর সমাবেশই হয়ে উঠল শুভেন্দুর জবাবি মঞ্চ। মমতা শুধু ভোটের সময়ে নন্দীগ্রামে যান বলে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শেষ বার গিয়েছিলেন ২০১৫ সালে ২১ ডিসেম্বর। প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করে এসেছিলেন। এর পরে আবার গেলেন ভোটের আগে।’’ মমতার সোমবারের সভায় জনসমাগম নিয়ে কটাক্ষ করে তিনি দাবি করেন, ‘‘৭টি জেলা থেকে ৮০০ বাসে করে ৩০ হাজার লোক আনা হয়েছিল।’’ সেই সঙ্গে একটি ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্যও করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের সভা হায়দরাবাদের একটি পার্টি আছে, তার মতো হয়েছে।’’ শুভেন্দুর বক্তব্যের ইঙ্গিত আসাদুদ্দিন ওয়েইসির ‘মিম’-এর দিকেই বলে জানাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা।
সোমবার মমতা নন্দীগ্রাম নিয়ে তাঁর আবেগের কথা বলেছেন বারবার। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘নন্দীগ্রামের জন্য কী করেছেন আপনি? অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে সিঙ্গুরে শিল্প বন্ধ করে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নন্দীগ্রামের লড়াই নিয়ে একটা লাইনও নেই!’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রামের মানুষ ভোলেনি যে, সেখানে গুলি চালানো পুলিশকর্তা অরুণ গুপ্তের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তৃণমূল সরকার চার বার তাঁকে এক্সটেনশন (চাকরির মেয়াদবৃদ্ধি) দিয়েছে। অধিকারীপাড়ায় গুলি চালানো পুলিশ অফিসার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদর করে দলে নিয়ে এসেছেন তৃণমূলের মহাসচিব (পার্থ চট্টোপাধ্যায়)।’’