যখন তিনি নেতৃত্বে ছিলেন, দলের উপস্থিতি তখন মাত্রই কিছু জায়গায়। তার মধ্যেও কখনও তাঁর বিরুদ্ধে ষ়ড়যন্ত্র মামলা করছে ব্রিটিশ পুলিশ, আরও পরে কখনও আবার কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা হচ্ছে। কঠিন সময়ের মধ্যে দেশে কমিউনিস্ট পার্টির পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন মুজফ্ফর আহমেদ (কাকাবাবু)। এখন নতুন করে কঠিন সময়ের মধ্যে পড়ে তাঁর শিক্ষাই মেনে চলার কথা বললেন সিপিএম নেতৃত্ব।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সমালোচনায় মুখর বিরোধী বামেরা। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে বুধবার মুজফ্ফরের ১২৭তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানের মঞ্চেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও আচরণে প্রতিদিন বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে, এই অভিযোগ করেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন দলকে মনে করিয়েছেন, ‘‘সরকারের সমালোচনা করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’’ একই সুরে সিপিএমের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘বন্যা ত্রাণ থেকে শুরু করে কোনও কিছুতেই এই সরকার দায়িত্ব নেবে না। নেতা-মন্ত্রীরা বন্যাদুর্গত এলাকায় গিয়ে ছবি তুলতে পারেন! আমরা কী করব? শুধু বললেই হবে না। যে কোনও পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যেখানেই বিপন্ন হবেন, তাঁদের পাশে দাঁড়়াতে হবে বামপন্থীদেরই।’’
শাসক দলের সন্ত্রাসের অভিযোগ এবং পুলিশ-প্রশাসনকে দিয়ে মিথ্যা মামলা রুজু করানোর ভয়ে বাম কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই ইদানীং কালেই ময়দানে নামতে ভয় পেয়েছেন। কাকাবাবুকেও-কে তাঁর জীবদ্দশায় নানা মিথ্যা অভিযোগ ও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছিল, সেই উদাহরণ দিয়েই এখনকার কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে চেয়েছেন সূর্যবাবুরা। সেলিমের কথায়, ‘‘কাকাবাবুর সময় আর এখনকার সময় এক নয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে একেবারে ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে পার্টিকে মানুষের কাছে কী ভাবে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, সেখান থেকেই শিক্ষা নিতে হবে আমাদের।’’ পথে নেমে আন্দোলনই যে তাঁদের লক্ষ্য, তা উল্লেখ করেই সূর্যবাবু নিয়ে এসেছিলেন সংগঠনের প্রসঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শেষ কথা হচ্ছে, সব কিছুর জন্যই সংগঠন লাগে। যেটা কাকাবাবু তৈরি করেছিলেন।’’ দলীয় শৃঙ্খলা জরুরি, তা-ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘কাজ করতে না পারলে স্বেচ্ছায় কমিটির পদ ছাড়া উচিত। যেটা কাকাবাবু করে দেখিয়েছিলেন।’’
পুরনো আমলের মতোই নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক পেয়ে এ দিনই অবশ্য উৎসাহিত হওয়ার একটি অবকাশ পেয়েছেন বিমানবাবুরা। ছেলে শান্তনু হালদারের মৃত্যুর পরে কর্মক্ষেত্র থেকে পাওনা টাকা থেকে তাঁর বৃদ্ধা মা এ দিন হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ ভবন ও জ্যোতি বসু রিসার্চ অ্যাকাডেমির জন্য দু’লক্ষ টাকা সিপিএম নেতাদের হাতে তুলে দেন।