‘মিত্তির বাড়ি’ ধারাবাহিকে আদৃতের লুক। ছবি: সংগৃহীত।
২২ দিনে ১২ কেজি ওজন কমিয়েছেন। দিনে এক বেলা খাওয়া। ছোট পর্দায় প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত আদৃত রায়। ‘মিঠাই’-এর পর ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মাঝে বিয়েও করেছেন। সম্প্রতি নতুন ধারাবাহিক ‘মিত্তির বাড়ি’র শুটিং ফ্লোরেই অভিনেতার হদিস পেল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: আপনাকে তো ফোনে ধরা মুশকিল!
আদৃত: আমি একটু একা থাকতে পছন্দ করি। শুরু থেকেই অভিনয় আমার ভাল লাগা। অভিনয়ে আসার পর দেখলাম, তার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে রয়েছে। রিল তৈরি থেকে শুরু করে সাক্ষাৎকার দেওয়া বা শোয়ে নাচ করা— সব কিছু। এগুলো করতে আমার খুব একটা ভাল লাগে না। ভাল লাগে অভিনয় করতে। ইন্ডাস্ট্রিতেও আমি কারও সঙ্গে সে রকম যোগাযোগে থাকি না।
প্রশ্ন: কেন?
আদৃত: আসলে কাজের সূত্রে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার, সেটা আমি রাখি। আমার প্রজেক্টের চিত্রনাট্যকারের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারি। প্রয়োজনে পরিচালকের বাড়িতেও পৌঁছে যাই। সেটাই আমার প্রায়োরিটি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি এখন একজন পরিচিত মুখ। যদি মানুষের থেকে দূরে থাকেন, তা হলে তো আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।
আদৃত: আমি চাই, পর্দায় আমার অভিনয়টাই একমাত্র বিচার্য বিষয় হয়ে উঠুক। তার বাইরে আমাকে নিয়ে কেউ যা খুশি বলতে পারেন। আমার কিছু যায়-আসে না। ‘মিঠাই’-এর পরেই বুঝে যাই, আমার কাছ থেকে দর্শকের প্রত্যাশা বাড়বে। ওই ধারাবাহিকটা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। তাই কী করব, সেটাও আমাকে ভাবতে হয়েছে। সেই মতো অন্য পথে না হেঁটে অভিনয়েই নিজের সবটা ঢেলে দিয়েছি।
প্রশ্ন: দেড় বছর পর আবার ধারাবাহিকে ফিরলেন। এতটা সময় নিলেন কেন?
আদৃত: এক বছর ধরে একটা ছবির (‘পাগল প্রেমী’) কাজ শেষ করলাম। মে মাসে শুটিং শেষ হয়েছে। ছবিতে আমার একাধিক লুক রয়েছে। ছবিটার জন্য প্রচুর খেটেছি। মানুষ আমাকে ওই ভাবে দেখতে অভ্যস্ত নয়। তাই নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছিলাম। তখন ধারাবাহিক করতেও পারতাম না।
প্রশ্ন: কিন্তু, প্রস্তাব তো আসতেই থাকত নিশ্চয়ই।
আদৃত: হ্যাঁ, প্রচুর। কিন্তু আমি ‘সিদ্ধার্থ মোদক’-এর থেকে অন্য কিছু করতে চাইছিলাম। কিন্তু, একই রকমের চরিত্রের প্রস্তাব আসছিল। তাই রাজি হইনি।
প্রশ্ন: ‘মিঠাই’-এর সিদ্ধার্থের তুলনায় ‘মিত্তির বাড়ি’র ধ্রুব কতটা আলাদা?
আদৃত: (হেসে) আইনজীবীর চরিত্র। শিরদাঁড়া সোজা রাখতে পছন্দ করে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। পৈতৃক বাড়ি বিক্রির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: কী মনে হচ্ছে, ‘উচ্ছেবাবু’কে কি টেক্কা দিতে পারবে ধ্রুব?
আদৃত: (হেসে) দেখা যাক, কী হয়। আমি তো আমার দিক থেকে চেষ্টা করবই।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকে আপনার বিপরীতে অভিনেত্রী পারিজাত চৌধুরী রয়েছেন। তাঁর প্রথম ধারাবাহিক। কেমন লাগছে তাঁকে?
আদৃত: খুবই প্রাণবন্ত। মাটিতে পা রেখে চলে। চরিত্রটার জন্য খুবই পরিশ্রম করছে। আমার বিশ্বাস, দর্শক ওকে পছন্দ করবেনই। ওকে দেখে বোঝা মুশকিল যে, ‘মিত্তির বাড়ি’ ওর প্রথম ধারাবাহিক।
প্রশ্ন: সাধারণত ধারাবাহিক হিট করলে অনেকে মেগাতেই থাকতে চান। আপনি ছবি আর মেগা সমানতালে কী ভাবে করছেন?
আদৃত: অভিনয়ের মাধ্যমটা আমার কাছে কোনও দিনই মুখ্য নয়, বরং অভিনয়টাই। নাটক, ছবি, ধারাবাহিক করেছি। বাংলা ছবিতে এখন সংখ্যার তুলনায় গুণগত মানের বিচারে ভাল ছবির খুবই প্রয়োজন।
প্রশ্ন: এক বছর ধরে একটা ছবিকেই সময় দিলেন!
আদৃত: ছবির জন্য আমাকে সময় দিতেই হত। ‘পাগল প্রেমী’ ৩০ দিনের বেশি শুটিং হয়েছে। কারণ ৯-১০ দিনের ছবি আমি আর করতে চাই না। ভাল লাগে না। উইকিপিডিয়ায় ছবির সংখ্যা বাড়াতে হলে পর পর ছবি করতেই পারতাম। কিন্তু সেটা চাই না।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনি তো বিয়েও করেছেন। বিয়ের পর জীবন কতটা বদলাল?
আদৃত: আমি তো ওকে (আদৃতের স্ত্রী কৌশাম্বী চক্রবর্তী) আগে থেকেই চিনতাম। (হাসতে হাসতে) ‘মিঠাই’-এর কথা উঠলে সবাই অভিনয়, পরিচিতি, পুরস্কারের কথা বলেন। ওই ধারাবাহিক থেকে আমার জীবনসঙ্গীকেও পেয়েছি। সে রকম কোনও পরিবর্তন আসেনি। ও শুটিংয়ে (‘ফুলকি’ ধারাবাহিক) ব্যস্ত। সপ্তাহান্তে বিজ্ঞাপনী শুটিংয়ের চাপ থাকে। তাই দু’জনেই চেষ্টা করি একটা ছুটির দিন খুঁজে একটু নিজেদের মতো কাটাতে।
প্রশ্ন: এ বার আপনিও ধারাবাহিকের শুটিংয়ে। দু’জনের সময় কাটানোর সুযোগ তো আরও কমে যাবে!
আদৃত: (হেসে) সেটা আমরাও জানি। তাই ছুটির দিনগুলো একসঙ্গেই কাটাব। তা ছাড়া রাত্রে বাড়ি ফিরে কথাবার্তার সুযোগ তো রয়েইছে।
প্রশ্ন: সঙ্গীত আপনার ভাল লাগার জায়গা। নিজের ব্যান্ডও রয়েছে। সঙ্গীত নিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা নেই?
আদৃত: অনেক কিছুরই পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এখন অনুষ্ঠান করা বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ, সেখানে শ্রোতাদের অনুরোধে আমার ছবি বা ধারাবাহিকের গানগুলোই করতে হত। অথচ, আঞ্চলিক ভাষায় আমরা মৌলিক গান দিয়ে যাত্রা শুরু করি। কোথাও যেন মৌলিকত্ব হারিয়ে যাচ্ছিল। আগামী মাসে এবং আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের একটা করে নতুন গান মুক্তি পাবে।
প্রশ্ন: আপনি কি অরিজিৎ সিংহের অনুরাগী? কারণ, আরজি কর আবহে আপনি সমাজমাধ্যমে শুধু ওঁর গাওয়া ‘আর কবে’ গানটাই শেয়ার করেছিলেন।
আদৃত: খুব বড় অনুরাগী। তবে শুধুই তিনি গেয়েছেন বলেই যে শেয়ার করেছিলাম, তা কিন্তু নয়। কারণ, ওই সময়ের জন্য ওই গানটাই ছিল আদর্শ। অন্য যে কেউ গাইলেও হয়তো আমি গানটা শেয়ার করতাম। খুব কম মানুষই সাহস করে এ রকম একটা গান তৈরি করতে পারেন। আবার তাঁদের সমর্থন করার জন্যও খুব কম মানুষ থাকেন। তাই একজন গায়ক এবং শিল্পী হিসেবে আমি তাঁকে সমর্থন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই যে, নামটা অরিজিৎ সিংহ। তিনি যে সকলের থেকে আলাদা কিছু করবেন, সেই প্রত্যাশা তো রয়েই যায়।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: কখনও দেখা হয়েছে অরিজিতের সঙ্গে?
আদৃত: না, দেখা হয়নি। বলরামপুরে ‘নূর জাহান’ ছবিটার শুটিং করার সময় অপা আন্টির (অপরাজিতা আঢ্য) সঙ্গে তিনি এক বার দেখা করতে আসেন। তখন এক ঝলক দূর থেকে দেখেছিলাম। আমি তাঁর কনসার্টে গিয়েছি। আমার দিদির স্বামী অরিজিতের দলের লিড গিটারিস্ট।
প্রশ্ন: তা সত্ত্বেও কখনও দেখা হয়নি!
আদৃত: যে বাড়িতে ওঁর টিম আড্ডা দেয়, মিউজ়িক করে, সেখানেও আমি গিয়েছি। কিন্তু, কখনও দেখা হয়নি (হাসি)।
প্রশ্ন: অরিজিতের সঙ্গে আপনার কখনও দেখা হলে কী করবেন, ভেবেছেন?
আদৃত: (হেসে) পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব। তাঁর প্রতি সারা জীবন আমার সম্মান বজায় থাকবে। কারণ বাংলা থেকে তিনি যে জায়গায় আজকে পৌঁছেছেন, তা অতুলনীয়।
প্রশ্ন: ইনস্টাগ্রামে ২৫টি পোস্ট। ফেসবুকে মাসের পর মাস আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অনুরাগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন কী ভাবে?
আদৃত: আমার ছোটবেলার বন্ধু অমিত আমার অর্থনৈতিক দিক, আমাদের ব্যান্ডের সবটাই দেখাশোনা করে। ওর থেকে অনেক খবর পাই। সমাজমাধ্যমে অনুরাগীরা অনেকেই মেসেজ করেন। সেগুলো দেখি। অনেক সময়ে উত্তরও দিই।
প্রশ্ন: যাঁরা বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি অহঙ্কারী হয়ে পড়ছেন, তাঁদের কী বলবেন?
আদৃত: আমি সাদা-কালোয় বিশ্বাস করি। ধূসরে বিশ্বাস করি না। তাই সাদা বা কালো— কেউ তাঁদের সমস্যা জানালে, নিশ্চয়ই সেটা বিবেচনা করে দেখব। কিন্তু অহেতুক আমাকে কিছু বললে, সেটা তাঁর সমস্যা।
প্রশ্ন: নতুন কাজের কোনও খবর?
আদৃত: এখন তো মন দিয়ে ‘মিত্তির বাড়ি’। এই মুহূর্তে অন্য কোনও কাজ নেব না।