West Bengal Assembly Election 2021

বাংলা থাকবে তৃণমূলের দখলেই, তবে বাড়বে পদ্ম, ইঙ্গিত মিলল জনমত সমীক্ষায়

জনমত সমীক্ষা কখনওই ভোটের প্রামাণ্য ফল নয়। অনেক সময় জনমত সমীক্ষা যেমন মিলেছে, তেমনই বহু ক্ষেত্রে পূর্বাভাস না মেলার নজিরও আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বাংলা দখলে থাকছে তৃণমূলেরই। তবে কমতে পারে আসন। আর বড় সংখ্যায় আসন পেয়ে রাজ্যে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ হিসেবে উঠে আসতে চলেছে বিজেপি। এমনই ইঙ্গিত উঠে আসছে সি ভোটার-এবিপি আনন্দের জনমত সমীক্ষায়। বিধানসভা ভোটের আগে আরও কয়েক দফা এমন সমীক্ষা হবে বলে সমীক্ষকেরা জানাচ্ছেন।

Advertisement

এ বারের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে ১৫৪ থেকে ১৬২টি বিধানসভা আসন পেয়ে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। পাঁচ বছর আগে তারা পেয়েছিল ২১১টি আসন। সে বারের তিন আসন থেকে এ বারের সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি পৌঁছতে পারে ৯৮ থেকে ১০৬ আসনে। বাম ও কংগ্রেসের জোট পেতে পারে ২৬ থেকে ৩৪টি আসন। শতাংশের নিরিখে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪৩%, বিজেপি ৩৭.৫% এবং বাম-কংগ্রেস ১১.৮% ভোট পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সমীক্ষায়।

জনমত সমীক্ষা কখনওই ভোটের প্রামাণ্য ফল নয়। অনেক সময় জনমত সমীক্ষা যেমন মিলেছে, তেমনই বহু ক্ষেত্রে পূর্বাভাস না মেলার নজিরও আছে। তবে জনতার মতামত ও ভাবনার ইঙ্গিত হিসেবে এই ধরনের সমীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। সি ভোটার-এবিপি আনন্দের এ বারের সমীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা এলাকার প্রায় ১৮ হাজার নমুনার ভিত্তিতে। সমীক্ষা করা হয়েছে গত ৬ থেকে ১১ জানুয়ারির মধ্যে।

Advertisement

রাজ্যে গত কয়েকটি নির্বাচনের ফল এবং এ বারের সমীক্ষার ইঙ্গিতকে পাশাপাশি রাখলে কয়েকটি লক্ষ্যণীয় চিত্র উঠে আসছে। পাঁচ বছর আগের বিধানসভা ভোটের তুলনায় তৃণমূলের আসন এবং ভোট-প্রাপ্তির হার কমছে ঠিকই। কিন্তু দু’বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রায় ৪৩.২৮% ভোট পেয়েছিল, বিধানসভায় তাদের ৪৩% ভোট পাওয়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছে সমীক্ষা। আবার ২০১৬-য় যে বিজেপি প্রায় ১০% ভোট পেয়েছিল, ২০১৯ সালের লোকসভায় তা প্রায় ৩০% বেড়ে ৪০.২৫% হয়েছিল। সমীক্ষার ইঙ্গিত, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ভোট কমতে পারে প্রায় ৩%। লোকসভায় রাজ্যে ২২টি আসন জিতেছিল তৃণমূল। প্রতি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭টি করে বিধানসভা এলাকা থাকে, এই হিসেব ধরলে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার কথা ১৫৪টি আসনে। সমীক্ষা দেখাচ্ছে, বিধানসভায় তারা পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৬২টি আসন। বিজেপি লোকসভায় জিতেছিল ১৮টি আসন, সাধারণ হিসেবে তাদের এগিয়ে থাকার কথা ১২৬টি আসনে। প্রকৃত পক্ষে তারা এগিয়েছিল ১২১টি আসনে। এ বারের সমীক্ষা বলছে, বিজেপি ৯৮ থেকে ১০৬টি আসন জিততে পারে। অর্থাৎ ‘১৯-এ হাফ, ২১-এ সাফ’ স্লোগান দিয়ে যারা চলছে, তারা লোকসভা ভোটের তুলনায় কিছুটা পিছিয়েই পড়ছে। অন্তত সমীক্ষার ইঙ্গিত তেমনই।

তবে সমীক্ষার মতে, লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট ৩%-এর কাছাকাছি কমলেও তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের ভোট প্রায় একই থাকছে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির হারানো ভোট কোথায় গেল, সেই প্রশ্ন থাকে। সমীক্ষা বলছে, অন্যান্য শক্তি পেতে পারে ৭.৭% ভোট। তার মধ্যে এমআইএম, শিবসেনার মতো সংগঠন থাকছে কি না এবং তারা কোথায় কেমন ভোট কাটতে পারে, এ সব প্রশ্ন নিয়ে চর্চা আপাতত অব্যাহত থাকবে। এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অন্যান্য দল ৬টি আসন পর্যন্ত পেতে পারে। তার মধ্যে পাহাড়ের তিন আসনে কেমন সমীকরণ কাজ করবে, অন্য কোন দল কোথায় আসন পেতে পারে, সে সব প্রশ্নের উত্তরও স্পষ্ট নয়।

তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, সাম্প্রতিক কালে করোনা অতিমারি এবং আমপান-এর বিপর্যয় মোকাবিলা এবং এখন ‘দুয়ারে সরকার’-এর মতো জনস্বার্থের প্রকল্প নিয়ে আসার সুফল শাসক দল ভোটে পাবে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা দলের তরফে যা দেখছি, তাতে বাংলার মানুষ তৃতীয় বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করতে মনস্থ করে ফেলেছেন।’’

অন্য দিকে, বিজেপির বক্তব্য, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা, আমপান-এর ত্রাণ বিলি ঘিরে দুর্নীতি, তোলাবাজি বা আইনশৃঙ্খলার বেহাল অবস্থার মাসুল তৃণমূলকে ভোটে দিতে হবে। এই সমীক্ষার ইঙ্গিতকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও ভোটের প্রচার শুরু হয়নি। খেলাই শুরু হয়নি, রেজাল্ট বেরিয়ে গেল!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘লোকসভা ভোটের আগেও সমীক্ষা বলেছিল, মেদিনীপুরে আমি ২৬% ভোট পাব, তৃণমূল পাবে ৪৮%। ফল কী হয়েছে, সবাই দেখেছে!’’

সমীক্ষা অনুযায়ী, বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেস জোট যা ভোট পেতে পারে, গত লোকসভায় দু’পক্ষের ভোট যোগ করলে তা প্রায় একই দাঁড়ায়। যদিও লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তারা গোটাসাতেক আসনে এগিয়েছিল আর এ বার তারা ২৬ থেকে ৩৪টি আসন পেতে পারে বলে সমীক্ষার ইঙ্গিত। এই পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দিতে চাননি বাম ও কংগ্রেস নেতারাও। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এই সমীক্ষা থেকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তবে লোকসভা ভোটের বিচারে আমাদের আসন বেড়ে ৭ থেকে ৩০ হচ্ছে বলে দেখানো হচ্ছে। যখন বাড়ে, তখন অত হিসেব মেপে বাড়ে না!’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘যেখানে সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগার ১৪৮ এবং সমীক্ষায় দেখাচ্ছে তৃণমূলের আসন হতে পারে ১৫৮, তা হলে তো গোটা ব্যাপারটাই সুতোয় ঝুলছে।’’ একই সুরে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘রাজ্যে ৭ কোটির বেশি ভোটার। সমীক্ষার তত্ত্বকে অস্বীকার না করেই বলছি, এই ধরনের নমুনা সমীক্ষা থেকে ভোটারদের ভাবনার প্রকৃত ছবি আসে না। তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরবে না। আর বিজেপির আস্ফালনও মে মাসে মিইয়ে যাবে!’’

একই সময়ে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে ৫ হাজার ৩৩২টি নমুনার ভিত্তিতে আরও একটি সমীক্ষা করেছে সি ভোটার-এবিপি আনন্দ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনও ‘মুখ’ না থাকা বিজেপিকে তৃণমূলের চেয়ে পিছিয়ে রাখছে। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদান তৃণমূলের জন্য ‘জোর ধাক্কা’ বলে ৪৫.৯% উত্তরদাতা মনে করলেও মুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ হিসেবে শুভেন্দুকে উপযুক্ত মনে করছেন ১১.৭%। দিলীপ ঘোষকে ১৪.৮%। প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতির ময়দানে এসে বিজেপির ‘মুখ’ বলে বরং কিছুটা সুবিধা পাবে গেরুয়া শিবির।

দিনচারেক আগে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একই সংস্থার করা আরও একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট এবং আংশিক সন্তুষ্ট মোট ৭৪% উত্তরদাতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে ওই সমর্থনের হার ৭৫%। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুল্যমূল্য। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকে সমর্থনকারীর সংখ্যা রাজ্যগুলির মধ্যে বাংলায় সব চেয়ে কম। এই সব সমীক্ষার ফলকে একত্রে এনে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, ‘মুখ’ হিসেবে মমতার গ্রহণযোগ্যতা তৃণমূলকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement