মহম্মদ সেলিম। —ফাইল ছবি।
বুধবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম কেন ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্ন তুলেছিলেন কৃষকনেতা তথা অবিভক্ত বর্ধমানের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অমল হালদার। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে ‘পাল্টা আওয়াজ’ উঠল ৩১ নম্বর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তিনতলার আব্দুল হালিম কক্ষে। তুললেন আর এক ‘অ’। অলকেশ দাস। নদিয়ার অলকেশ প্রাক্তন সাংসদ। এ বারেও তিনি লোকসভা ভোটে রানাঘাট আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন।
সূত্রের খবর, অমল যে ভাবে সেলিমের প্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন, তার চেয়েও চড়া মেজাজে অলকেশ বলেছেন, সেলিম প্রার্থী না হলে প্রচার এই জায়গায় যেত না। মুর্শিদাবাদ আসনে এত ভোটও অন্য কেউ পেতেন না। বামেদের মধ্যে একমাত্র সেলিমই দ্বিতীয় হয়েছেন। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে বৈঠকে বলতে গিয়ে সেলিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘সূর্যদা বলেছেন, সেলিম পলিটব্যুরোর সদস্য। তিনি প্রার্থী হবেন কি না, সেটা উনি ব্যক্তিগত ভাবে ঠিক করেননি। পলিটব্যুরো ঠিক করেছিল।’’ উল্লেখ্য, বাংলায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদে থেকে ভোটে লড়ার নজির সেলিমের আগে একমাত্র ছিল সূর্যকান্তেরই। ২০১৬ সালে রাজ্য সম্পাদক থাকাকালীন নারায়ণগড় থেকে বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন তিনি। যদিও পরাস্ত হয়েছিলেন সমনামী তৃণমূলের সূর্য অট্টের কাছে।
সিপিএম যে ভোট পর্যালোচনা নিয়ে রাজ্য কমিটির ‘বর্ধিত অধিবেশন’-এর পথে যাচ্ছে, গত রবিবার তা লেখা হয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইনেই। এ-ও লেখা হয়েছিল যে, কলকাতার কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে সেই অধিবেশন করতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে সেলিম সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, বস্তুতই সেই ‘বর্ধিত অধিবেশন’ হচ্ছে। সেটি হবে আগামী ২৩-২৫ অগস্ট নদিয়ার কল্যাণীতে। এই সময়ে বর্ধিত অধিবেশনের পরিকল্পনা সিপিএমের ক্ষেত্রে খানিকটা নজিরবিহীনই। কারণ, চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকেই সারা দেশে সিপিএমের সাংগঠনিক সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হবে। শাখা, অঞ্চল, জেলা, রাজ্য সম্মেলন হয়ে আগামী বছর এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেসের নির্ধারিত সূচি রয়েছে।
বঙ্গে আরও একটি ভোট বিপর্যয়ের পর রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। সূত্রের খবর, বৈঠকে বাংলায় দলের খারাপ ফলের ধারাবাহিকতা নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন তিনি। যদিও পরে সাংবাদিক বৈঠকে সীতারাম বলেছেন, এ বারে বাংলায় প্রচারে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে এ প্রসঙ্গে সেলিম কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, প্রচারে যে ‘আশাবাদ’ জেগেছিল, ভোটের বাক্সে তা বাস্তবায়িত হয়নি। সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন নিয়েও বিবিধ মতামত উঠে এসেছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে।
বৈঠক শেষে সেলিম জানিয়েছেন, গোটা জুলাই মাস ধরে পর্যালোচনা করবে শাখা থেকে জেলা কমিটিগুলি। তার পরে সমর্থকদের মতামত শোনা হবে। সেই পর্বের পরে সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত নন, কিন্তু রাজ্য-রাজনীতির বিষয়ে ওয়াকিবহালদের থেকেও মতামত শুনবে দল। সেই নির্যাস একত্র করে অগস্টে বর্ধিত অধিবেশনে বসবে সিপিএম।