Narada Scam

Narada Scam: ‘মুখ পোড়া’র আশঙ্কাতেই কি সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করল সিবিআই

সিবিআইয়ের মামলা নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিনীত সরণ ও বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চে শুনানি হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ০৭:০৮
Share:

—ফাইল চিত্র

নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত চার নেতা-মন্ত্রীকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল সিবিআই। আজ, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি নিজেরাই সেই মামলা প্রত্যাহার করে নিল। আইনজীবীদের একাংশের মতে, সর্বোচ্চ আদালতে ‘মুখ পোড়ার’ আশঙ্কাতেই আপাতত ‘রণে ভঙ্গ’ দিল তারা।

Advertisement

সিবিআইয়ের মামলা নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিনীত সরণ ও বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চে শুনানি হয়। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, সিবিআইয়ের কোনও সুরাহা পাওয়ার নেই। কারণ, কলকাতা হাই কোর্টে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ফিরহাদ হাকিমদের জামিন নিয়ে শুনানি চলছে। তার মধ্যে যে তাঁরা নাক গলাতে চান না, তা বুঝিয়ে বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, সিবিআই মামলা প্রত্যাহার করে হাই কোর্টে গিয়েই যা বলার বলুক। রাজ্য সরকার অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে, হাই কোর্টের শুনানির মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে কীভাবে সিবিআইয়ের মামলা গৃহীত হয়ে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হল!

সুপ্রিম কোর্ট এ দিন সিবিআইয়ের মামলায় কোনও রায় দেয়নি। কিন্তু একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিবিআই ও কলকাতা হাই কোর্টকে বিঁধেছে। বিচারপতিরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নাকে শীর্ষ আদালত ভাল চোখে দেখছে না। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না ও আইনমন্ত্রীর আদালত চত্বরে যাওয়া, তার সঙ্গে সিবিআই দফতর ঘেরাও নিয়ে বিচারপতিরা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি সংস্থার উপরে চাপ তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের ধর্নাকে আমরা ভাল চোখে দেখি না।”

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ বিচারপতিরা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী বা অন্য যে কেউ সিবিআইয়ের কাজে বাধা দিলে বা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিলে সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। সংবিধানে এ বিষয়ে সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বিচারপতিরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কেন্দ্র বা সিবিআইকে পরামর্শ দিচ্ছেন না।

সিবিআই ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করলেও এখনও মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীদের বিরুদ্ধে নারদ-কাণ্ডে তা করেনি। ফিরহাদদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়ায় সাধারণত যা হয় না। আজ সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ের মামলায় রায় না দিলেও ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন তুলেছে, নারদ কাণ্ডে দুই শ্রেণির অভিযুক্ত রয়েছেন। একাংশের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছে। আর এক অংশের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা হয়নি। কাদের সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে? ১৭ মে চার নেতার গ্রেফতারির পরে বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁদের জামিন দিলেও, সে দিন রাতেই হাই কোর্ট বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে জামিনের আদেশে স্থগিতাদেশ জারি করে। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না, সিবিআইয়ের কাজে বাধা, আদালতে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতির দিকে আঙুল তুলে বিশেষ আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে বলে সিবিআই অভিযোগ তোলে। তার ভিত্তিতেই সিবিআই জামিনে স্থগিতাদেশ আদায় করে নিয়েছিল। আজ সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের দিকেও আঙুল তুলে বলেছে, ‘আদালতে বিশেষ বেঞ্চ গঠিত হয় ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। প্রথম বার দেখলাম, ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নিতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন হয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের আর্জি ছিল, গৃহবন্দির নির্দেশ খারিজ করে অভিযুক্তদের ফের হাসপাতালে পাঠানো হোক। যার অর্থ, সুস্থ হলেই তাঁদের ফের জেলে যেতে হবে। মদন, সুব্রত এখনও অসুস্থ বলে হাসপাতালে থাকলেও ফিরহাদ, শোভন বাড়িতে। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ের আর্জিতে সায় দিলে তাঁদের জেলে যেতে হত। হাই কোর্টে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জামিনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তাতেও আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু সিবিআই ভুল করে পিটিশনে বিচারপতি বিন্দলের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে! সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই সুবিধা করতে না-পারায় পুরো বিষয়টি ফের হাই কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে চলে গেল। বুধবার সেখানে শুনানির কথা থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বুধ ও বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে শুনানি হচ্ছে না। তারপরে তা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement