ফাইল চিত্র।
করোনার প্রকোপের মধ্যে সিবিএসই দ্বাদশ এবং আইএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ওই দুই ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, সেটা যেন দু’সপ্তাহের মধ্যে আদালতে জানিয়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে কি না, না-হলে মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, তা খতিয়ে দেখতে তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটি এ দিনেও দীর্ঘ বৈঠক করে। আলোচনা হয় মূলত পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নের প্রক্রিয়া নিয়েই।
সিবিএসই দ্বাদশ এবং আইএসসি পরীক্ষা বাতিলের আর্জি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন আইনজীবী মমতা শর্মা। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, করোনা আবহে সিবিএসই পরীক্ষা হচ্ছে না। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে কাউন্সিল ফর দ্য ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগ্জ়ামিনেশনের সচিব জেরি অ্যারাথুনও জানিয়ে দেন, আইএসসি পরীক্ষাও বাতিল করা হল। সেই সঙ্গে সিবিএসই এবং আইএসসি দুই বোর্ডই অবশ্য জানিয়ে দেয়, কেউ যদি মূল্যায়নে সন্তুষ্ট হতে না-পারেন, পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার পরে তিনি পরীক্ষায় বসতে পারবেন।
মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা চার সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু শীর্ষ আদালত জানায়, এই মূল্যায়ন-পদ্ধতি এক রাতের মধ্যেই চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব। যা-ই হোক, দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হল। কারণ, পড়ুয়াদের কলেজে ভর্তির ব্যাপার রয়েছে।
মামলাকারী মমতা এ দিন ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, শুধু সিবিএসই বা আইএসসি নয়, রয়েছে কয়েকটি রাজ্য বোর্ডও। তারা এখনও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানায়নি। সব মিলিয়ে ১.২ কোটি পড়ুয়া। তাঁদের পরীক্ষার বিষয়েও আদালত নির্দেশ দিক। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। ধৈর্য ধরতে হবে। আগে সিবিএসই তাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি কী, সেটা দু’সপ্তাহের মধ্যে জানাক। তার পরে রাজ্য বোর্ডগুলি বিষয়ে দেখা যাবে।
সিবিএসই দ্বাদশের পরীক্ষা বাতিলের পরে কয়েক জন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছিলেন মোদী। পরীক্ষার্থীরা তাঁকে জানান, পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ঠিক। তাঁদের কারও কারও মতে, করোনার মধ্যে পরীক্ষা দেওয়াটা মানসিক চাপের ব্যাপার।
করোনার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা না-হওয়ায় প্রায় দেড় বছর ধরে একই পড়াশোনা করে যেতে হচ্ছিল। পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার সময় এবং পরবর্তী পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পরে শিক্ষা মহলের একাংশ মনে করছে, রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও বাতিল হওয়ার দিকেই হয়তো কিছুটা হলেও ঝুঁকে থাকল। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক আদৌ হবে কি না, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সরকার গত বুধবার যে-বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছে, তারা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। পরীক্ষা না-হলে মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, সেই বিষয়েও বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মতামত জানাবে।
কিছু শিক্ষক সংগঠনের মতে, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নবম থেকে দশমে ওঠার নম্বর বিবেচনা করে তার ভিত্তিতে এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাঁদের মাধ্যমিকের নম্বরে বা একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। আবার গত কয়েক বছরের পড়ুয়াদের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকের দেওয়া নম্বর এবং স্কুলের তিন বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মূল্যায়ন করা যায়।