সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তে এখনই হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, মামলার সব পক্ষকে নোটিস দিতে হবে। দু’সপ্তাহ পরে মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দু’পক্ষ আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র বার করা যায় কি না দেখবে। তবে আংশিক সময়ের অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে আচার্যের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না আদালত। আপাতত হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল থাকবে।
এই মামলায় বিচারপতি সূর্য কান্তের পর্যবেক্ষণ, “স্থায়ী উপাচার্য ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ দিন চলতে পারে না। কেন শিক্ষামন্ত্রী একটি নামের তালিকা পাঠিয়ে দিলেন? উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দু’পক্ষ কি একসঙ্গে কাজ করতে পারবে না? উপাচার্য নিয়োগে আচার্য না রাজ্য, কে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, এখন আমরা সেই বিচার করছি না। আপাতত অস্থায়ী উপাচার্যেরা কাজ চালিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু কী ভাবে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যাবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। নবান্নের বক্তব্য ছিল, রাজ্যপাল যে পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেছেন, তা বৈধ নয়। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর বা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই উপাচার্য নিয়োগে একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন আচার্য। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ামৃত্যু নিয়ে চাপানউতরের মধ্যে সেই প্রতিষ্ঠানে রাজ্যপালের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে রাজ্য-রাজভবন সংঘাত আরও বৃদ্ধি পায়। যদিও এর আগে কলকাতা হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলায় ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য। তারপরই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন।
উত্তরবঙ্গ, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য প্রযুক্তি (ম্যাকাউট), কলকাতা, কল্যাণী, বর্ধমান, কাজী নজরুল, ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন আচার্য। ওই উপাচার্যদের বেতন বন্ধ করে দেয় শিক্ষা দফতর। রাজ্যের যুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আচার্য। পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম মেনে ওই নিয়োগ করা হয়নি। ওই উপাচার্যদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন অধ্যাপক সনৎকুমার ঘোষ। গত ২৮ জুন হাই কোর্ট মামলা খারিজ করে আচার্যের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়।
হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন অধ্যাপক সনৎকুমার ঘোষ। গত ২৮ জুন হাই কোর্ট মামলা খারিজ করে আচার্যের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। হাই কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু উপাচার্য পদের কোনও প্যানেল না পাঠিয়ে রাজ্যপালকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২৭ জনের নাম পাঠিয়েছিলেন। ফলে আলোচনার পরিবেশ না থাকায় সিদ্ধান্ত নেন আচার্য। উচ্চ আদালত রাজ্যকে ওই উপাচার্যদের বেতন-সহ ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজভবন-নবান্নের বিরোধ থামছে না। হাই কোর্টের ওই রায়ের পরে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। সম্প্রতি এ নিয়ে আচার্যের ভূমিকার সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।