Sundarini

৮০ টাকায় গরুর খাঁটি দুধ, গোয়ালঘর থেকে বাড়ির দোরগোড়ায় ‘সুন্দরিনী’

গ্রাম থেকে সংগৃহীত দুধ থেকেই তৈরি হচ্ছে মিষ্টি। ভেজালের সম্ভাবনা নেই বলে জানাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উল্গানাথন।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ১৯:৪৯
Share:

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী ব্লকের চৌরঙ্গি গ্রামের এক মহিলা গোয়ালঘরে দুধ দুইছেন। ছবি: সোমনাথ মণ্ডল

কাঁচা রাস্তার ধারে গাড়ি থামতেই দূরে দেখা গেল, মাথায় ঘোমটা দিয়ে বছর পঞ্চাশের এক মহিলা দুধ দুইছেন। আরও কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেই দুধ রাখা হচ্ছে স্টিলের একটি বালতিতে। লিটার চারেক হতেই, তিনি হন্তদন্ত হয়ে ওই গ্রামেরই সমবায় সমিতির অফিসের দিকে ছুটলেন। আগে থেকেই সেখানে ৬০-৭০ জন মহিলা স্টিলের ক্যান হাতে দাঁড়িয়ে। তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহের পর বড় বড় দুধের ক্যান নিয়ে গাড়ি ছুটল প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টের উদ্দেশে।

Advertisement

বাড়ির গোয়ালঘর থেকে সমবায় সমিতির দোরগোড়া পর্যন্ত দুধ সংগ্রহের যে ছবি দেখলাম, তাতে খুবই যত্নের ছাপ। কিন্তু সেই দুধ যে একেবারে খাঁটি, তাতে জল বা অন্য ভেজাল যে মিশছে না, তা কী ভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে? এ সব প্রশ্নেই ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘সুন্দরিনী’র কর্তারা যদিও দাবি করছেন, এ দুধ একেবারেই খাঁটি। প্রশ্ন করা গেল, কী ভাবে? সুন্দরিনী প্রকল্পের এক সদস্য বিশ্বজিৎ দেব শর্মার দাবি, গরুর খাবার থেকে শুরু করে তাদের পরিচর্যা, এমনকি অসুখ-বিসুখে দেওয়া ওষুধপত্রও কার্যত ভেষজ পদ্ধতি মেনে হয়। গুণমান বজায় রাখতে প্লাস্টিক এড়িয়ে কাচের বোতলে বিক্রি করা হয় দুধ। এই সব নিয়ম মেনে চললে খাঁটি দুধ পাওয়া সম্ভব বলেই জানালেন বিশ্বজিৎ।

স্টিলের ক্যান হাতে দাঁড়িয়ে ‘সুন্দরিনী’র সদস্যরা।

Advertisement

এটা চৌরঙ্গি। মধ্য কলকাতা নয়, এটা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী ব্লকের প্রত্যন্ত এক গ্রাম। এই গ্রাম থেকে খাঁটি গরুর দুধ কাচের বোতলে বন্দি হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি। গোয়ালঘর থেকে দুধ প্রক্রিয়াকরণ, তার পর বোতলে পুরে বাড়ি বা়ড়ি পৌঁছে দেওয়ার কর্মকাণ্ডটা কী ভাবে চলছে, তা সরেজমিনে দেখতেই চৌরঙ্গি আসা। ভোর চারটে নাগাদ কলকাতা থেকে বেরিয়ে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে নফরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌরঙ্গিতে পৌঁছতে সকাল প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছিল। তার পর গ্রাম ঘুরে দেখা। দেখা গোটা কর্মকাণ্ড। জানা গেল, শুধু দুধ নয়, ওই দুধের ছানা থেকে মিষ্টি, পনির, ঘি-ও তৈরি হচ্ছে। ক্রেতাদের হাতে সে সব পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ। কলকাতা জুড়ে ‘সুন্দরিনী ন্যাচারালস’-এর মিষ্টির দোকানও চালু হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: কোভিড শঙ্কায় ছুঁল না কেউ, ফ্রিজারে রইল বৃদ্ধের দেহ

বিশ্বজিৎ দেব শর্মা এই প্রকল্পের বিষয়ে আরও তথ্য দিলেন। ‘ওয়েস্টবেঙ্গল কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রডিউসার্স ফেডারেশন লিমিটেড’-এর আওতায় ‘সুন্দরবন কো-অপারেটিভ মিল্ক অ্যান্ড লাইভস্টক প্রডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটিড’-এর পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৯৯৭-তে। কিন্তু গ্রামের মানুষ এই প্রকল্প থেকে তেমন কোনও সুবিধা পাচ্ছিলেন না। ফলে নতুন মোড়কে ফের এর পথ চলা শুরু হয় ২০১৫-য়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নামকরণ করেন ‘সুন্দরিনী’। মূলত সুন্দরবন এলাকায় এই প্রজেক্টটা শুরু হওয়ায়, মুখ্যমন্ত্রী ওই নামকরণ করেন। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, মহিলাদের স্বনির্ভর করতে গরুর দুধ সংগ্রহ করা হবে।

মাত্র ২৫ লিটার দুধ সংগ্রহের মাধ্যমে শুরু হয়ে ছিল পথচলা। এখন বাসন্তী, মধুরাপুর ১, মধুরাপুর ২, কাকদ্বীপ, কুলপি, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, জয়নগর ২— দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই ৮টি ব্লকে সুন্দরিনীর প্রকল্প চলছে। প্রতিটি ব্লকে একটি করে কো-অপারেটিভ তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় এই মুহূর্তে সাড়ে চার হাজার সদস্য রয়েছেন।

প্লাস্টিকে নয়, কাচের বোতলে খাঁটি দুধ

চৌরঙ্গিতে এই প্রকল্পে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের সকলেই মহিলা। ওঁরাই জানালেন, সমবায় সমিতিতে ভেজাল দুধ এনে কেউ পার পাবেন না। কারণ কী? ওদের ব্যাখ্যা, ‘অটোমেটিক মিল্ক কালেকশন সিস্টেম’ (‌এএমসিএস) –এর মাধ্যমে দুধ নেওয়া হয়। দুধে জল বা ভেজাল মেশানো থাকলে ওই যন্ত্রে সঙ্গে সঙ্গে তা ধরা পড়ে যায়। এমনকি দুধের গুণগত মান কম হলেও তা বাতিল হয়ে যায়। ওই যন্ত্রে গুণগত মানের উপর দাঁড়িয়ে দুধের লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণও হয়। এর পর সদস্যদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা পড়ে যায়।

অটোমেটিক মিল্ক কালেকশন সিস্টেম’ (‌এএমসিএস) –এর মাধ্যমে দুধ নেওয়া হয়। দুধে জল বা ভেজাল থাকলে ওই যন্ত্রে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে।

বিশ্বজিৎ বললেন, এর পরেও যদি কেউ ভেজাল দুধ বিক্রি করার চেষ্টা করেন তা হলে তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেওয়ার বিধান রয়েছে। ফলে ভুলেও ভেজাল দুধ এখানে নিয়ে আসার কথা ভাবেন না কেউই। তিনি আরও জানালেন, সমবায় সমিতিতে দুধ সংগ্রহ করার পর তা ওই ব্লকেরই প্রসেসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াকরণ করার পর রুবি এবং জয়নগরে সুন্দরিনীর প্যাকেজিং সেন্টারে চলে আসে দুধ। সেখানে কাচের বোতলে ভরা হয়। গোটা পদ্ধতি শেষে সুন্দরিনীর এক লিটার দুধের দাম দাঁড়ায় ৮০ টাকা। অথচ, নামী ব্রান্ডের এক লিটার দুধের দাম ৬০-৬৫ টাকা। তা হলে কেন ক্রেতারা বেশি টাকা দিয়ে কিনবেন সুন্দরিনীর দুধ? সুন্দরিনী কর্তাদের দাবি, এই বেশি দামের কারণ আছে।

আরও পড়ুন: ভুয়ো নথি দিয়ে সল্টলেকে সরকারি জমি দখল, সিআইডির জালে প্রোমোটার

অষ্টাদশ শতকে গুজরাতের ভাবনগরের মহারাজার সূত্রে ‘গির’ প্রজাতির গরু প্রথম ব্রাজিলে গিয়েছিল। তার পর চিত্রটা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। দুধের বিপ্লব ঘটে পেলে-র দেশে। ব্রাজিলে ওই গির গরু থেকে সংকর গাভীও জন্ম নেয়। গির প্রজাতির গরুর দুধের গুণগতমান ভাল। বেশি দুধও দেয়। এখন সুন্দরবন জুড়ে গির গরু প্রতিপালনে ঝোঁক দেখা যাচ্ছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। সুন্দরিনীর প্রকল্পের জন্য যাঁরা দুধ দেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের কাছেই গির প্রজাতির গরু রয়েছে। গির গরুর কান সাধারণত লম্বা হয়। ঘাস খাওয়ার জন্য মাঠে-ঘাটে সাধরণত ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। এ ছাড়া গোয়ালে খড়-বিচালি খাওয়ানো হয়। কিন্তু সুন্দরিনী প্রকল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তারা বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে থাকেন।

চৌরঙ্গিতেই দেখা গেল বিঘের পর বিঘে চাষ হচ্ছে সরগম ঘাস। শুধু গরুর খাবে বলেই এই চাষ। সরগম ছাড়াও, হাইব্রিড ন্যাপিয়ার, বার্সিম ঘাস চাষ করা হয় সুন্দরবনের এই আটটি ব্লকে। এ ছাড়াও ওটস এবং ভুট্টাও চাষ করা হয় এখন। এই চাষে কোনও ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। জৈব পদ্ধতিতে গোবর সংরক্ষণ করে তা দিয়েই চাষ করা হয়।

চৌরঙ্গিতেই বিঘের পর বিঘে চাষ হচ্ছে সরগম ঘাস। শুধু গরুর খাবে বলেই এই চাষ।

রাসায়নিক মুক্ত খাবার খাওয়ানোর জন্য স্বাভাবিক কারণে দুধও হয় রাসায়নিকহীন। দুধ দোওয়ার সময়েও ব্যবহার করা হয় স্টিলের বালতি। প্লাস্টিকের ব্যবহার একদম নিষিদ্ধ। দুধের ক্যানও তাই স্টিলের। যেখানে নামী সংস্থার দুধ প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে বিক্রি করা হয়, সেখানে ব্যতিক্রম সুন্দরিনী। কাচের বোতলে ভরে তা বিক্রি করছে তারা। এত কিছু নিময় মানার পরেই খাঁটি দুধ পৌঁছচ্ছে কলকাতার ঘরে ঘরে। সুন্দরিনী প্রকল্পের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অম্বিকাপ্রসাদ মিশ্রের কথায়, ‘‘ফলে দামটা কিছুটা বেশি। আর এক বার যিনি আমাদের সংস্থার দুধ খাবেন, তিনি বাজার চলতি দুধের সঙ্গে খাঁটি দুধের ফারাক বুঝতে পারবেন।’’

কাচের বোতলে ভরা হচ্ছে দুধ।

সুন্দরিনীর মিষ্টি আবিষ্কারে সরকারি ময়রা

রসগোল্লার জন্ম কোথায়, তা নিয়ে বাংলা এবং ওড়িশার মিষ্টিপ্রেমীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে বাগবাজারের নবীন দাশ, ফুলিয়ার হারাধন ময়রাদের হাত ধরে যে রসগোল্লার বিপ্লব ঘটেছিল, তাতে অনেকেই সহমত। রসগোল্লা আবিষ্কারের পর, মিষ্টি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা কিন্তু থামেনি। নতুন ধরনের মিষ্টির জন্মও হয়েছে এ রাজ্যে। তা বলে ময়রা দিয়ে মিষ্টি তৈরি করবেন সরকারি কর্তারা? তেমনটাই হচ্ছে কিন্তু সুন্দরিনী প্রকল্পে। ইতিমধ্যে ‘সুন্দরিনী ন্যাচারালস’ নামে দক্ষিণ কলকাতায় ৮টি মিষ্টির দোকানও খোলা হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরেও রয়েছে সুন্দরিনীর বিপণি।

সমবায় সমিতি থেকে টাকা নিচ্ছেন ‘সুন্দরিনী’র সদস্য।

চৌরঙ্গি থেকে রুবি পৌঁছতে প্রায় বিকেল। রুবি মোড়ের কাছে সরকারি উদ্যোগে ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে বিপুল কর্মকাণ্ড। প্রায় ৫০ ধরনের মিষ্টি সেখান থেকে পৌঁছে যাচ্ছে ওই দোকানগুলিতে। এখানে করোনা বিধি মেনে কাজ করতে দেখা গেল ময়রাদের। কাচের বোতলে ভরা হচ্ছে দুধও। সরকারি নজরদারিতে মিষ্টি তৈরির এই উদ্যোগ যে কোনও মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থাকে কিন্তু কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে। মিষ্টির গুণগত মান বজায় রাখতে সরকারি কর্তাদের নজরদারিতেই তা তৈরি হচ্ছে।

করোনা মোকাবিলায় ‘আরোগ্য সন্দেশ’ আবিষ্কার করে চমকে দিয়েছেন এই ময়রারা। মিষ্টি দিয়েও যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়, সেই লক্ষ্যে এই আবিষ্কার।

আদা, এলাচ, কাঁচা হলুদ, জায়ফল, যষ্টিমধু, দারচিনি, তুলসীপাতা, গোলমরিচ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আরোগ্য মিষ্টি। চিনির ব্যবহার নেই। রয়েছে মধুর ব্যবহার। সন্দেশের পাশাপাশি ‘আরোগ্য দই’ও পাওয়া যাচ্ছে। আবিষ্কৃত হয়েছে ‘আইসক্রিম রসগোল্লা’ ও ‘ডাব মালাইকারি’। এই মিষ্টি দু’টিরও জন্ম হয়েছে সরকারি আঁতুড়ঘরে।

অম্বিকাপ্রসাদ মিশ্র জানালেন, হালতু, টালিগঞ্জ মুচিপাড়া, ঠাকুরপুকুর ডায়মন্ড পার্ক, সন্তোষপুর, বেহালার পর্ণশ্রীতেও চালু হয়েছে মিষ্টির দোকানগুলি। সুন্দরিনীর লক্ষ্য, শহরে অন্তত ৫০টি মিষ্টির দোকান চালু করার। সেই সঙ্গে একটি ‘অ্যাপ’ও তৈরি করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে ওই অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার দিলেই ঘরে পৌঁছে যাবে রাবড়ি, রসগোল্লা, দই, হানি কেশর সন্দেশ, নলেন গুড়ের রসগোল্লার মতো নানা ধরনের মিষ্টি।

কলকাতায় ‘সুন্দরিনী’র মিষ্টির দোকানে ভিড়।

গ্রাম থেকে সংগৃহীত দুধ থেকেই তৈরি হচ্ছে মিষ্টি। ফলে ভেজালের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উল্গানাথন। তাঁর কথায়, ‘‘খাঁটি দুধ থেকে রাসায়নিক মুক্ত মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। সুন্দরিনী ন্যাচারালস ব্র্যান্ড ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয় উঠেছে। মিষ্টি ছাড়াও, নানা ধরনের চাল, ডাল, মধু, ঘি-ও তৈরি করা হচ্ছে।’’

সুন্দরিনীতে আরও কী কী করা যায় তা নিয়ে সর্বক্ষণ ভাবনাচিন্তা চলেছে বলে জানালেন অম্বিকাপ্রসাদ মিশ্র। প্রজেক্টের উপর যাতে সর্ব ক্ষণ নজর রাখা যায়, সে জন্য তাঁকে ছুটে বেড়াতে হয় এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে। দিনের একটা বড় সময় থাকেন রুবির কর্মশালায়। তাঁর কথায়: “গরুর খাঁটি দুধ থেকেই তৈরি হয় আমাদের মিষ্টি। আসলে ভাল ছানা থেকেই সুস্বাদু মিষ্টি হয়। আর আমাদের এখানে কোনও ভেজাল দুধ সংগ্রহ করা হয় না। ফলে দুধের পাশাপাশি আমাদের মিষ্টির স্বাদ ও গুণগতমান অন্যদের চেয়ে অনেক গুণ ভাল।”

লক্ষ্য স্বনির্ভরতা, মহিলাদের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে টাকা

বিশ্বজিতের সঙ্গে গ্রাম ঘোরার সময় বোঝা গেল, দুধ সংগ্রহ থেকে তার প্রক্রিয়াকরণ— সর্বত্রই মহিলারা কর্মরত। অম্বিকাপ্রসাদ মিশ্রের দাবি, মহিলাদের স্বনির্ভর করাটাই লক্ষ্য সুন্দরিনীর। এই কো-অপারেটিভে একমাত্র মহিলারাই সদস্য হতে পারেন। সরাসরি তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার।

এই প্রকল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বাড়িতে বায়ো গ্যাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ধীরে ধীরে। উনুনের আঁচে দূষণ কমানোর চেষ্টা চলছে। শুধু দুধ বেচেই নয়, তাঁদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে রাসায়নিক মুক্ত চাষেও। ইতিমধ্যেই রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে রাধাতিলক, গোবিন্দভোগ চাল, কালাভাত, সোনামুগ ডাল উৎপাদন করা হচ্ছে। এবং তা প্যাকেটজাত করে বিক্রি শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের মধুও মিলছে।

এক জন সদস্য প্রতি দিন কত লিটার দুধ বিক্রি করছেন, তা সঙ্গে সঙ্গেই নথিবন্ধ হয়ে যায়। দুধের গুণগত মান অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৪০ টাকা প্রতি লিটার দাম পান তাঁরা। যা আগে পাড়ার গোয়ালাদের কাছ থেকে পেতেন না। পি উল্গানাথনের দাবি, সংসারের হাল ফেরাতে মহিলাদের হাতেই টাকা দিতে চায় সরকার। সুন্দরিনী সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে।

ছবি: সোমনাথ মণ্ডল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement