সাংবাদিক বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার এবং জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
উত্তর ২৪ পরগনার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুলল বিজেপি। দাবি করল, কয়েক দিন আগে কলকাতা বন্দরে আটক হওয়া ২০০ কোটি টাকার হেরোইন আসলে এসেছিল তৃণমূলের এক কর্মীকে সরবরাহ করার জন্য। প্রায় ৪০ কেজি হেরোইন শরিফুল এন্টারপ্রাইজের নামে এসেছিল বলে দাবি। বিজেপির দাবি, ওই সংস্থার মালিক শরিফুল ইসলাম মোল্লা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। সেই সঙ্গে এমনটাও দাবি করা হয়েছে যে, ওই শরিফুল সন্দেশখালি ১ ও ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শিবু হাজরা এবং শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ। বৃহস্পতিবার বিজেপি রাজ্য দফতরে এই দাবি করেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। এই মাদক পাচার সংক্রান্ত ঘটনায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী যুক্ত বলেও দাবি করা হয়েছে। তবে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে তৃণমূল। দলের বিধায়ক ইদ্রিস আলির দাবি, ‘‘যে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সব মিথ্যা। বিজেপির মতো মিথ্যাচারী দল আর দু’টি নেই। ওদের কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।’’
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও এই অভিযোগের পরে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাদক-পাচারের রানি তো ওদের দলেই আছেন। আর বিজেপি খোঁজ নিক, ওদের এক নেতা ‘গোল্ড লোন’-এর ব্যবসা করছেন। ওরা না বললে আমরাই নাম প্রকাশ্যে আনব।’’ এরও জবাব দিয়েছেন সুকান্ত। বলেছেন, ‘‘বিজেপির কেউ তদন্তে ভয় পায় না।’’
বিজেপির অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। দলের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, গিয়ার বাক্সে লুকিয়ে কন্টেনার ভর্তি করে হেরোইন আনা হয়েছিল। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি এবং ছবিও পেশ করে রাজ্য বিজেপি। তবে তার সত্যতা যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার অনলাইন। প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর গুজরাত পুলিশের এটিএস কলকাতা বন্দরে তল্লাশি চালিয়ে ২০০ কোটি টাকার ৪০ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে বলে জানিয়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, গত বছর মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে এই মাদক ‘বুক’ করা হয়েছিল। অভিযোগ, গত মার্চ মাসে দুবাই থেকে ওই মাদক কলকাতায় আসে। মোট ৬০৫টি প্যাকেটে এবং আড়াই হাজার কিলোগ্রাম স্পেয়ার পার্টসের সঙ্গে ওই মাদক এসেছিল। কিন্তু কলকাতা বন্দরে সেই মাদক পড়ে থাকলেও শরিফুল মোল্লা তা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিয়ে যাননি। বিজেপির দাবি, পলিউশন সার্টিফিকেটের সমস্যার কথা জানিয়ে বন্দর থেকে ওই মাদক ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরে ৯ সেপ্টেম্বর গুজরাত এটিএস তল্লাশি চালিয়ে ওই কন্টেনার বাজেয়াপ্ত করে।
বিজেপির দাবি, এর পর শরিফুলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও তাঁকে খুঁজে পায়নি বিএসএফ। বিজেপির আশঙ্কা, শরিফুল বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন সিবিআইয়ের থেকে রাজ্যের সিআইডি বেশি কার্যকর। সেই কারণে আমি চাইব, শরিফুলকে কোথায় আছেন রাজ্যই তা খুঁজে বার করুক।’’ শরিফুলের এক ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা সন্দেশখালির ব্লক ২ এর তৃণমূল সভাপতি শেখ শাহজাহান রাজ্যের এক মন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি ১৭ থেকে ১৮ বার বৈঠক করেন। কন্টেনারটি আটক হওয়ার পরই হয় ওই বৈঠক। দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি ওই মন্ত্রীর দফতর বদল হয়েছে বলে জানালেও সুকান্ত বা জগন্নাথ কারও নাম উল্লেখ করেননি।
বিজেপির দাবি, মাদক ব্যবসার জন্য ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছিল। শরিফুল ওই টাকা কোথায় পেয়েছিলেন, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন সুকান্ত। তাঁর বক্তব্য, দীর্ঘ দিন কলকাতা বন্দরে আফগানিস্তান থেকে দুবাই হয়ে আসা মাদক পড়ে থাকলেও তা পুলিশ ধরতে পারেনি। কন্টেনারটি নিলামের অপেক্ষায় ছিল। গুজরাতের এটিএস এসে ধরে ফেলে। সুকান্ত এমন দাবিও করেন যে, ‘‘তৃণমূল কর্মী শরিফুল এখন কোথায়, সে প্রশ্নের উত্তর সবার আগে জানাতে হবে। তিনি কি পালিয়ে গেলেন কোথাও?’’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, শরিফুলের সঙ্গে তৃণমূলের দুই নেতার ফোনে কথাবার্তার রেকর্ডিং তাঁদের কাছে রয়েছে। তবে তা বিজেপি এখনই প্রকাশ্যে আনবে না বলে জানিয়েছেন সুকান্ত।