—ফাইল চিত্র।
দেশের বর্তমান অবস্থার মোকাবিলায় গাঁধী-সুভাষ-রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদের ঐতিহ্যই ফের তুলে ধরলেন ইতিহাসবিদ সুগত বসু। বললেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে সত্যাগ্রহে নামতে হবে।
শুক্রবার বনহুগলির ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজে পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুগতবাবু বলেন, ‘‘নেতাজির জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই মুসলিম। নেতাজি কখনওই ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতাকে রেয়াত করেননি। একই ভাবে গাঁধী-রবীন্দ্রনাথও দেশের ভাবনায় সামগ্রিকতাকে ঠাঁই দিয়েছেন।
গেরুয়া শিবির ও সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ইতিহাসবিদদের অনেকেই সুভাষকে ‘গৌরবান্বিত’ করতে গিয়ে গাঁধীকে খাটো করার চেষ্টা করেন। সেটা যে অসঙ্গত, তা জানাতে গিয়ে সুগতবাবু তথ্য দিয়ে বলেন, ‘‘নেতাজি ও গাঁধীজির মধ্যে আন্দোলনের পথ নিয়ে মতবিরোধ ছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা কোনও দিনই নষ্ট হয়নি। গাঁধীজিকে ‘জাতির জনক’ আখ্যা দিয়েছিলেন নেতাজি।’’ সুভাষকে ‘দেশপ্রেমিকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ’ আখ্যা দিয়েছিলেন গাঁধী। সুগতবাবু জানান, স্বাধীনতার উৎসবে যোগ দিতে গাঁধী দিল্লি চলে যাননি, দাঙ্গাবিধস্ত কলকাতায় ছিলেন।
আরও পড়ুন: এটা নিরপেক্ষ থাকার সময় নয়: নন্দিতা
দেশের প্রগতিশীল ইতিহাসচর্চাকে যে-ভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে, এ দিনের অনুষ্ঠানে তার নিন্দা করেন তৃণমূল সংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘‘সাভারকর যে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন, এই তথ্য তো মানতে হবে। আর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তো আন্দোলনের জন্য জেলে যাননি!’’ পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের সভাপতি অধ্যাপক রণজিৎ সেন বলেন, ‘‘ইতিহাস গবেষণা তথ্যনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানভিত্তিক হতে হবে। সেটা আমাদের লক্ষ্য।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে গত বছরের নির্বাচিত গবেষণা প্রবন্ধের সঙ্কলন প্রকাশিত হয়। পুরস্কৃত করা হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের সেরা গবেষকদের।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উঠেছে সংবিধানের প্রসঙ্গ। ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কে অনেকেই বলেন, এতে ব্রিটিশ শাসনের নানান বৈশিষ্ট্য রয়ে গিয়েছে। শাসক দল অনেক সময়েই সংবিধানকে হাতিয়ার করে গণতন্ত্রকে দমিয়ে দেয়। এ দিন সুগতবাবুর বক্তৃতাতেও সেই প্রসঙ্গ ওঠে। নাৎসি জার্মানির কথা তুলে তিনি বলেন, ‘‘জার্মানির ভাইমার সংবিধানকে হাতিয়ার করে হিটলার ক্ষমতায় এসে তানাশাহি চালিয়েছিলেন।’’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মন্তব্যের বিশেষ তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই।