তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
পাগড়ি আর উত্তরীয় রাখা ছিল তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে সেই পাগড়ি উঠল তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের মাথায়। গলায় উঠল উত্তরীয়টি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতার ‘ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল’-এ জোড়াসাঁকো বিধানসভার তৃণমূলের কর্মসূচিতে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন শাসকদলের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক।
মঙ্গলবার ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিসভা ডেকেছিলেন জোড়াসাঁকোর তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্ত। সেই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ সুদীপ। কুণালকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, কুণাল নিজের অপারগতার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বিবেককে। কারণ, মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়িতে পূর্বনির্ধারিত সভা ছিল কুণালের। সেখানে গিয়েওছিলেন কুণাল। কিন্তু অত দূর থেকে কলকাতায় তিনি কখন ফিরবেন, তার নিশ্চয়তা ছিল না। ফলে আগেই কুণাল জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার জোড়াসাঁকোর কর্মসূচিতে তাঁর থাকা সম্ভব হবে না।
কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতে পরিস্থিতি বদলে যায়। কুণাল কলকাতায় ফিরে এসে সোজা চলে যান কর্মসূচিতে। কিন্তু সুদীপ উপস্থিত হননি। সুদীপের ‘অনুপস্থিতি’ এবং কুণালের ‘আবির্ভাব’ ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদেরও কিছুটা অবাক করে। তার পরে দেখা যায়, সুদীপের জন্য যে পাগড়ি-উত্তরীয় রাখা ছিল, তা কুণালকে পরিয়ে দিচ্ছেন বিধায়ক তথা সভার আহ্বায়ক বিবেকই। ওই সভায় বক্তৃতাও করেন কুণাল। পরে প্রশ্ন করা হলে কুণাল বলেন, “বিবেক খুব আন্তরিক ভাবেই আমায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমিই ওঁকে বলেছিলাম, যাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ, কলকাতা থেকে অনেকটা দূরে আমার পৃথক কর্মসূচি ছিল। তবে সময়ে কলকাতায় ফিরে আসায় আমি সেখানে পৌঁছে যাই। স্থানীয়দের অনেকেই আমায় ফোন করেছিলেন। বিবেক যে ভাবে আমায় সম্মান জানিয়েছেন, তাতে আমি আপ্লুত।”
কৌতূহলের বিষয় হল: সুদীপ কেন ওই কর্মসূচিতে গেলেন না।
এ ব্যাপারে সুদীপের বক্তব্য জানা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব আসেনি। তবে তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য, মঙ্গলবার সকালে উত্তর কলকাতার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনন্দা সরকারের তৃণমূলের এক যুবনেতাকে সর্বসমক্ষে চড় মারার ঘটনা ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। সে কারণেই সুদীপ সন্ধ্যার কর্মসূচি ‘এড়িয়ে’ গিয়ে থাকতে পারেন। ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, স্থানীয় যুবনেতাকে ওই কাউন্সিলর প্রকাশ্য রাস্তায় চড় কষাচ্ছেন। তা নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পর্ব চলেছে দিনভর। ওই ঘটনার পর বিজেপি-সহ বিরোধীরা সুনন্দার বিবিধ ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে থাকে। তাতে দেখা যায়, কোনও কর্মসূচিতে সুনন্দা রয়েছেন সুদীপের পাশে। কোনওটায় আবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পাশে। উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে সুনন্দা পরিচিত ‘সুদীপ-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই। তৃণমূলের অনেকের মতে, সংবাদমাধ্যমকে এড়াতেই সুদীপ হয়তো মঙ্গল-সন্ধ্যার কর্মসূচিটি কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন। সুদীপের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক বলেন, “সুদীপদা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন তিনি কলকাতায় নেই।” তার পর তিনি বলেন, “আমি সকলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। যাঁরা পেরেছেন এসেছেন। যেমন শশী পাঁজা আসতে পারবেন না বলে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।”
উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে সুদীপ-কুণাল সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। আবার সাম্প্রতিক মানিকতলা উপনির্বাচনে বিবেকের ভূমিকা নিয়ে দলের মধ্যে বিবিধ বক্তব্য রয়েছে। মানিকতলা উপনির্বাচনে তৃণমূলের তরফে আহ্বায়ক ছিলেন কুণাল। শোনা যায়, ওই ভোটে দীনেশ বাজাজ ‘সক্রিয়’ থাকায় বিবেক নিজেকে কিছুটা ‘গুটিয়ে’ রেখেছিলেন। জোড়াসাঁকো, বড়বাজার এলাকার রাজনীতিতে দীনেশের সঙ্গে বিবেকের সমীকরণও মোটামুটি সকলেরই জানা। তবে প্রেক্ষাগৃহে নজর কেড়েছে একটিই বিষয়— সুদীপের জন্য রাখা পাগড়ি শেষমেশ উঠেছে কুণালের মাথায়!