ছবি: ফেসবুক থেকে।
তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি হিসাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করলেন বর্তমান সভাপতি সুব্রত বক্সী। শনিবার তৃণমূলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বসেছিল কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। অভিষেকও সেই বৈঠকে ছিলেন। সভার শুরুতেই বক্তৃতা করতে উঠে বক্সী ওই প্রস্তাব দেন। মমতা যদিও সঙ্গে সঙ্গে বক্সীকে থামিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেন, এই প্রসঙ্গে এখন আলোচনার প্রয়োজন নেই।
দলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বক্সী রাজ্য সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদও বটে। শনিবার বক্তৃতার প্রায় শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘আমার শরীর খারাপ। তাই এখন আর রাজ্যের কোথাও সে ভাবে যেতে পারি না। এখন ভবানীপুরের পার্টি অফিস আর তৃণমূল ভবনে যাই।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক অভিষেককে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ও ভাল কাজ করছে। কী ভাবে জনসংযোগ যাত্রার মতো কর্মসূচি সামাল দিয়েছে, তা আমরা সবাই দেখেছি। তাই আমি বলব ওকেই রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক।’’
দলের প্রতিষ্ঠা সভাপতির এমন বক্তব্য শুনেই তৃণমূলনেত্রী মাইক হাতে তুলে নেন। বক্সীকে থামিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। এই বিষয়টি পরে দেখা যাবে।’’ এর পর অবশ্য অভিষেককে সভাপতি করার প্রস্তাব নিয়ে আর কোনও কথা বলেননি বক্সী।
একটা সময় বক্সী একই সঙ্গে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ের পর অভিষেককে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করেন মমতা। তার পর একে একে দলের সব বর্ষীয়ান নেতাকে প্রণাম করে তাঁদের আশীর্বাদ নিয়েছিলেন অভিষেক। সেই বর্ষীয়ান নেতাদের তালিকায় ছিলেন বক্সীও। অভিষেক প্রণাম করার সময় তাঁকে কেঁদে ফেলতেও দেখা গিয়েছিল সেই সময়ে। চোখে জল নিয়ে বক্সী সেই দিন বলেছিলেন, ‘‘আমার যা আছে সব তোকে দিয়ে দেব।’’ রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, শনিবারের বৈঠকে দলের গুরুদায়িত্ব অভিষেকের হাতে ‘অর্পণ’ করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। মমতা যদিও তা পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন।
বক্সীর সঙ্গে মমতার রাজনৈতিক সম্পর্কের সূচনার আশির দশক থেকে। ১৯৮৪ সালে যখন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে মমতা প্রথম বার কংগ্রেসের সাংসদ হন, সেই ভোটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বক্সী। পরে ১৯৯৮ সালে নতুন দল (তৃণমূল কংগ্রেস) গঠনের সময় বিশ্বস্ত বক্সীকেই রাজ্য সভাপতি করেছিলেন মমতা। ২০০১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে মমতার কথাতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর-পশ্চিম (অধুনা বিলুপ্ত) বিধানসভা থেকে ভোটে লড়াই করেন তিনি। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েই জয় পান। এর পর ২০০৬ সালে বিষ্ণুপুরের জেতা আসন ছেড়ে মমতার কথাতেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কলকাতার চৌরঙ্গি বিধানসভায় প্রার্থী হন তিনি। বিধানসভা বদল হলেও, জয় হাতছাড়া হয়নি বক্সীর।
২০১১ সালে নবগঠিত বিধানসভা ভবানীপুরে প্রার্থী হয়ে ৪৯ হাজার ভোটে জয় পান বক্সী। মমতা প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে রাজ্যের পূর্ত ও পরিবহণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন তাঁকে। ওই বছরেরই অগস্টে মমতার জন্য ভবানীপুর আসন থেকে ইস্তফা দেন তিনি। পরে নভেম্বরের উপনির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে সাংসদ হন তিনি। ২০১৪ সালেও দক্ষিণ কলকাতায় নিজের আসনে জয় পেয়েছিলেন বক্সী। ২০১৫ সালে মুকুল রায়ের সঙ্গে প্রথম দফায় দূরত্ব তৈরি হয় তৃণমূল নেতৃত্বের। ওই বছরই মুকুলকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে বিশ্বস্ত বক্সীকে ওই পদে বসান মমতা।
২০১৯ সালে আর লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে চাননি বক্সী। ভোটের অনেক আগেই মমতাকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বস্ত সঙ্গী বক্সীর দাবি মেনে তাঁর বদলে দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী করা হয় মালা রায়কে। তবে ২০২০ সালে দলনেত্রীর নির্দেশে রাজ্যসভার সাংসদ হন বক্সী। কিন্তু এ বার সেই বক্সীই রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে চাইলেন। কিন্তু মমতার ইচ্ছায় রাজ্য সভাপতি পদে থেকে যেতে হচ্ছে তাঁকে।