শুভেন্দু অধিকারী।
পুর নির্বাচনের আগে শমসেরগঞ্জে দলের দুই নেতার প্রকাশ্য বিরোধে অস্বস্তিতে পড়েছেন ধুলিয়ানে তৃণমূলের নেতারা। পরিস্থিতি জানতে ধুলিয়ানের দলীয় পুরপ্রধান সুবল সাহাকে তলব করেছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার সন্ধেয় তাঁকে দেখা করতে বলেছেন শুভেন্দুবাবু। কিন্তু যাঁদের মধ্যে বিরোধ, সেই দুই নেতা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ আনারুল হক ও বিধায়ক আমিরুল ইসলামকে ডাকা হয়নি সেখানে।
আনারুল দাবি করেন, ‘‘শুভেন্দুবাবুকে ফোনে সব কথা জানিয়েছি।’’ আমিরুল তৃণমূল যুবর জেলা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘কথা বলেছি তৃণমূল যুবর সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মেসেজ করে সব ঘটনা জানিয়েছি শুভেন্দুবাবুকেও।’’
কিন্তু এই গন্ডগোলের আঁচ যে তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে পড়ছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবল সাহা বলেন, “দুই নেতার এ ভাবে প্রকাশ্য লড়াইয়ে আমরা বলির পাঁঠা হয়ে যাচ্ছি। দুই নেতাই চাইছেন নিজের নিজের লবি তৈরি করতে। কিছু সমাজবিরোধী তার সুযোগ নিচ্ছে। এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। আমি শুভেন্দুবাবুকে ফোন করে সব জানিয়েছি। তিনি সোমবার সন্ধে সাড়ে ৫টায় আমাকে দেখা করতে বলেছেন।” শমশেরগঞ্জের তৃণমূলের অন্দরেরই খবর, শমসেরগঞ্জে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি আমিরুলের দিকে। পঞ্চায়েত সমিতিও। তার সভাপতি আমিরুলের স্ত্রী। আনারুলের দিকে ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। ধুলিয়ানের কাউন্সিলাররা দু’চার জন ছাড়া মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় সরাসরি কোনও দিকেই ঝোঁক দেখাচ্ছেন না।
অপহরণের অভিযোগে শাসক দলের রাজনীতি জড়িয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে পুলিশও। অভিযুক্তরা বিধায়কের অনুগামী বলে দাবি উঠেছে। কিন্তু এখনও তাঁদের ধরা হয়নি। তাঁরা এলাকা ছাড়া বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে পুলিশের এক কর্তার দাবি, “যাকেই ধরব, বিধায়কের দলবল থানায় বিক্ষোভ শুরু করবে। ধুলিয়ানে শাঁখের করাত অবস্থা আমাদের।” বিধায়ক আমিরুল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে শনিবার যে ভাবে নিজের অনুগামীদের ডেকে সভা করে জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ আনারুল হককে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন বিধায়ক আমিরুল ইসলামের দলবল, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। দলের ব্লক সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, শনিবারের সভায় ১২৮ জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, ২৪ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, ১০ জন কাউন্সিলার, ৯টি অঞ্চলের দলীয় সভাপতি ও সমস্ত শাখা সংগঠনের সভাপতি, অঞ্চল সভাপতিদের উপস্থিতিতে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে দলীয় নেতাদের কাছে। সবার স্বাক্ষর সহ তা পাঠানো হচ্ছে।
তবে তিনি বলেন, “এনিয়ে জেলা সভাপতি বা শুভেন্দুবাবু কারও সঙ্গেই আমার কোনও কথা হয়নি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই তো আনারুল যা খুশি করছেন। দলের ক্ষতি হচ্ছে। বহুবার জেলা ও রাজ্য নেতাদের জানিয়েছি। কেউ কোনও ব্যবস্থা নেননি। তাই কাকে আর কী বলব? দলের ভালমন্দ তাঁরাই বুঝবেন। তাই আর কাউকে কিছু বলিনি।”
বিধায়ক আমিরুল বলছেন, ‘‘অপহরণের চেষ্টা সত্যিই হয়েছিল কি না, সেটা যা দেখার পুলিশ দেখবে। কিন্তু এর সঙ্গে আমাকে জড়ানো কেন? আমি সমস্ত ঘটনা অভিষেকবাবুকে জানিয়েছি। জেলা সভাপতি আবু তাহেরের সঙ্গে কথা বলেছি। শুভেন্দু অধিকারীকে মেসেজ করে সব জানিয়েছি। এখনও কেউ আমায় ডেকে পাঠায়নি। ডাকলে যাব। তবে পুরসভার নির্বাচনের আগে মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তো হচ্ছেই।”
আনারুলও বলছেন, “আমাকে বহিষ্কারের দাবি কেন? এতে রাজনীতি কোথা থেকে এল? আমি শুভেন্দুদাকে সব জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি নিজে দেখছেন বলে আমাকে বলেছেন।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবু তাহেরের কথায়, ‘‘আমরা সবই দেখছি। কিন্তু এখন কিছু বলব না। যা বলার সময় মতো বলব।’’