অনিতা বসু পাফ। ফাইল চিত্র।
তৎকালীন পরিস্থিতির কারণে এবং দেশের প্রয়োজনেই যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নাৎসি-ফ্যাসিবাদী জোটের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা ফের মনে করিয়ে দিলেন তাঁর মেয়ে অনিতা বসু পাফ। বাবার ১২৬তম জন্মদিনের প্রাক্কালে অনিতা সংবাদমাধ্যমে যে-বিবৃতি দিয়েছেন, তার মূল সুর কার্যত নেতাজির অসাম্প্রদায়িক এবং সমাজতন্ত্র-গণতন্ত্রে বিশ্বাস। একই সঙ্গে বাবার চিতাভস্ম দেশে ফেরানোর দাবিও জানিয়েছেন অনিতা। বলেছেন, প্রায় ৭৭ বছর আগে মৃত্যুর পর থেকে সুভাষচন্দ্রের অস্থিভস্ম বিদেশে রয়েছে। তা দেশে ফিরিয়ে আনলে সুভাষপ্রেমীরা তাঁদের প্রিয় নেতাকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে পারবেন।
কয়েক বছর ধরে উগ্র হিন্দুত্ব শিবিরের নেতারা সুভাষচন্দ্রকে সম্মান দিতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে নাৎসি জার্মানি, ফ্যাসিবাদী ইটালি কিংবা স্বৈরাচারী জাপানের সম্পর্ক নিয়েও ব্যাপক প্রচার চলছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, কার্যত কংগ্রেস কিংবা বামপন্থার সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের সম্পর্ক খারিজ করে তাঁকে হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক কালে ধরা পড়েছে। অনিতার বক্তব্যে সেই প্রচেষ্টার বিরোধিতা শোনা গিয়েছে।
অনিতা বলেছেন, সুভাষচন্দ্র সকলের জন্য শিক্ষার পক্ষে ছিলেন। লিঙ্গবৈষম্য, জাতপাত, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধেও তাঁর স্পষ্ট অবস্থান ছিল। সুভাষচন্দ্র ব্যক্তিজীবনে ধার্মিক হলেও তিনি চাইতেন, স্বাধীন ভারত হবে ধর্মনিরপেক্ষ। স্বাধীন ভারতে সব ধর্ম ও বর্ণের লোকের সমানাধিকারের পক্ষে ছিলেন তিনি। আজাদ হিন্দ বাহিনীতেও তিনি সেই সংস্কৃতির প্রচলন করেছিলেন। অনিতা মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, রাজনৈতিক ভাবে সুভাষচন্দ্র সমাজতন্ত্রী ছিলেন এবং আধুনিক ভারত সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাসি বা সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে বলে বিশ্বাস করতেন। সেই প্রসঙ্গে অনিতা বলেন, সেই সময় সুভাষচন্দ্র এক প্রকার বাধ্য হয়েই অক্ষশক্তি বা ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন। কারণ, তাঁর লক্ষ্য ছিল, দেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে অক্ষশক্তির বাইরে অন্য কোনও দেশ সুভাষচন্দ্রের লড়াইয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিল না।