উদয় কুমার সিংহ।
পুলিশের উর্দিতে শ্রীখোল নিয়ে দেশাত্মবোধক গানে বুধবার থেকে নেট মাধ্যমে ভাইরাল তিনি। কিন্তু তাঁর খোঁজ ছিল না কারও কাছে। বৃহস্পতিবার দিনভর খোঁজ করে অবশেষে তাঁকে খুঁজে পেল আনন্দবাজার অনলাইন।
তিনি উদয়কুমার সিংহ। বাড়ি মালদহ জেলার পুকুড়িয়া গ্রামে। চাকরি সূত্রে আপাতত রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরে। জেলা রিজার্ভ ফোর্সের সাব ইন্সপেক্টর উদয় গান গাইতে ভালবাসেন। কীর্তনের প্রতিও টান রয়েছে। সেই সূত্রেই মৃদঙ্গও বাজান। গত রবিবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান হয়েছিল বালুরঘাটে পুলিশের রিজার্ভ অফিস চত্বরে। সেখানেই সতীর্থদের নিয়ে গান গেয়েছিলেন তিনি।
তবে তখনও উদয় জানতেন না, তাঁর সেই গানের ভিডিয়ো এমন ভাইরাল হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার সে সব শুনে আনন্দবাজার অনলাইনকে উদয় বললেন, ‘‘মনের আনন্দে গেয়েছিলাম। মৃদঙ্গ বাজানো আমার শখ। ছবি তুলেছিলেন এক হোমগার্ড। তবে তা যে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে ভাবতে পারিনি।’’
তবে আনন্দের পাশাপাশিই খানিক শঙ্কিতও উদয়। এর জন্য বিপদে পড়বেন না তো? পুলিশের উর্দি পরে খোল বাজানোয় কোনও নিয়মভঙ্গ নেই তো? প্রচারের আলোয় এলে চাকরিজীবনে কোনও ক্ষতি হবে না তো? বলছিলেন, ‘‘আর দু’বছর চাকরি আছে। তারপরে গানই গাইব। প্রচারের জন্য আমি গাইনি। সে দিন গেয়েছিলাম দেশপ্রেমের টানে। সেটা কে যে এমন ছড়িয়ে দিল কে জানে!’’ বারবার একই প্রশ্ন করেছেন উদয়, ‘‘এর জন্য কোনও বিতর্ক হবে না তো!’’ পাশাপাশিই বলছেন, ‘‘আমি যে বাদ্যযন্ত্র (‘খোল’ নয়, উদয় বলছেন ‘মৃদঙ্গ’) বাজিয়েছি, তাতে কিন্তু কোনও শব্দদূষণ হয়নি।’’
কিন্তু কেন গাইলেন এমন গান? আদ্যোপান্ত ভাল মানুষ উদয়ের কথায় কথায় দেশ-সমাজ নিয়ে চিন্তা। বললেন, ‘‘এই যে আফগানিস্তানে এখন যা হচ্ছে, তাতে আমার ভয় করে! মানুষের নিরাপত্তা এত কম। সকলের মধ্যে দেশের প্রতি ভালবাসা থাকাটা খুব দরকার। আমরা যারা পুলিশে চাকরি করি তারা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু প্রতিটি মানুষের মধ্যেই দেশপ্রেম, সমাজের প্রতি দায়িত্বজ্ঞান থাকা দরকার। সকলের মধ্যে ঐক্য থাকাটাও খুব দরকার।’’
উদয় নিজেকে মনে করেন সচেতনতার প্রচারক। বলেন, ‘‘অনেক ছেলেমেয়ে বাবা-মা’কে দেখতে চায় না। আমি তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি। পুলিশের ভূমিকা যদি ঠিক না থাকে, তা হলে দেশের কী হবে! আমি তাই সহকর্মীদেরও গান গেয়ে সচেতন করার চেষ্টা করি।’’
ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলেন না। কথা শুরু করেন ‘হ্যাঁ, নমস্কার’ বলে। এমন বাঙালিয়ানা নিয়ে থাকা উদয়ের সংসার মা আর স্ত্রীকে নিয়ে। একমাত্র ছেলে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। পুলিশে চাকরি করলেও গান গাওয়াটা উদয়ের নেশা। বাড়িতে অবসর পেলেই বসে পড়েন গান নিয়ে। সঙ্গে হারমোনিয়াম নিয়ে বসেন স্ত্রী শঙ্করী। নিজে কখনও খোল, কখনও করতাল বাজিয়ে গান করেন।
দেশ অথবা ইশ্বর— সবের প্রতিই ভক্তিভাব প্রবল উদয়ের। গানে গানে সেই ভাবই ফুটে ওঠে। আবার সমাজ সচেতনাতার জন্যও গান করেন। জেলা পুলিশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে করোনা নিয়ে গান গেয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজও করেছেন। এ বার গাইলেন দেশাত্মবোধক গান। তবে এ-ও নতুন কিছু নয়। অতীতেও গেয়েছেন। শুধু ভাইরাল হলেন এই প্রথম।