প্রতীকী ছবি।
করোনার জন্য বাতিল হওয়া আইএসসি পরীক্ষায় বিশেষ পদ্ধতিতে মূল্যায়নের পরে সে যত নম্বর পেয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় পরীক্ষার্থী মধুবন্তী দত্ত। অন্তত দু’টি বিষয়ে আবার পরীক্ষায় বসতে চায় সে। কিন্তু তার প্রশ্ন, পরীক্ষা দিয়ে আখেরে কি লাভ কিছু হবে? কারণ, যত দিনে ফল বেরোবে, তত দিনে পেরিয়ে যাবে কলেজে ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ।
সম্প্রতি সিআইএসসিই বোর্ড বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, আইসিএসই এবং আইএসসি-র মূল্যায়নে যারা সন্তুষ্ট নয়, তারা চাইলে অফলাইনে সব বিষয়ের বা কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারবে। সেই পরীক্ষা হবে ১৬ অগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তার ফল বেরোবে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
শুধু মধুবন্তীই নয়, শহরের বেশ কিছু আইএসসি পাশ করা পড়ুয়া জানাচ্ছে, পরীক্ষার ফলাফলে তারা অনেকেই খুশি নয়। অফলাইনে পরীক্ষা হলে বেশি নম্বর পেত বলেই তাদের মত। তাতে পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়া সহজ হত। কিন্তু নতুন করে পরীক্ষা দিলে তার ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই কলেজে ভর্তির আবেদন করার দিন পেরিয়ে যাবে। তাই প্রশ্ন উঠছে, যদি ফের পরীক্ষা দিয়ে নম্বর বাড়ে, তা হলেও কি বেশি নম্বর পাওয়া মার্কশিট কলেজে ভর্তির জন্য কোনও কাজে আসবে?
শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল জানাচ্ছে, তাদের স্কুল থেকে আইসিএসই এবং আইএসসিতে নতুন করে পরীক্ষা দিতে বা অন্তত একটি-দু’টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে খুব কম আবেদন এসেছে। ক্যালকাটা গার্লস স্কুলের অধ্যক্ষা বাসন্তী বিশ্বাস জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁদের স্কুল থেকে মাত্র এক জন ছাত্রী ফের পরীক্ষা দিতে চেয়ে আবেদন করেছে। তিনি বলেন, “নতুন নম্বর আদৌ কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে কাজে লাগবে কি না, তা বুঝতে না পারায় হয়তো অনেকে আবেদন করতে উৎসাহ বোধ করছে না। তবে নতুন করে পরীক্ষা দিয়ে নম্বর বেড়ে গেলে তা পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষায় কাজে লাগতে পারে।” দিল্লি পাবলিক স্কুল, নিউ টাউনের কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, তাঁদের খুব কম সংখ্যক পড়ুয়া ফের পরীক্ষায় বসতে চেয়ে আবেদন করেছে। রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানান, তাঁদের স্কুলে এ নিয়ে কেউই আবেদন করেনি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আইসিএসই ও আইএসসির এ বারের পরীক্ষার্থীরা সবাই মূল্যায়ন নিয়ে সন্তুষ্ট।’’ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ থমাসিন আরুলাপ্পান বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ৬ জন পরীক্ষার্থী আইএসসি পরীক্ষা নতুন করে দেবে। আমাদের স্কুলে ভাল ফল হয়েছে। তাই খুব বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে না।’’ হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সাপ্রু জানান, তাঁদের স্কুল থেকে কোনও পরীক্ষার্থীই নম্বর বাড়ানোর জন্য আইসিএসই বা আইএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে না।
কলেজে ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ পেরিয়ে গেলেও নতুন মার্কশিটে নম্বর বাড়লে সেই পরীক্ষার্থী পরে আরও ভাল জায়গায় পড়ার সুযোগ পেতে পারে বলে মনে করছেন ডন বস্কো পার্ক সার্কাসের অধ্যক্ষ ফাদার বিকাশ মণ্ডল। তিনি জানান, তাঁদের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে কড়া করে খাতা দেখা হয়। তাই আইএসসিতে তাঁদের স্কুলের পরীক্ষার্থীরা যে নম্বর পেয়েছে, তাতে কেউ কেউ সন্তুষ্ট নয়। তারা মনে করছে, অফলাইনে পরীক্ষা হলে আরও বেশি নম্বর আসত। নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মেলায় সুবিধা পেতে পারে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল থেকে ৬ জন আইএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। বেশি নম্বর পেলে যে নতুন মার্কশিট পাবে, সেটা তো সারা জীবনের জন্য থাকবে। উচ্চশিক্ষার জন্য সেই মার্কশিট অবশ্যই কাজে আসবে।’’